অয়ন শীল-শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জুটির শাস্তি চাইছেন সকলে। প্রতীকী ছবি।
অসহায়তা বদলে যাচ্ছে ক্রোধে! সকলেই চাইছেন শাস্তি।
ছেলেমেয়ের চাকরির জন্য ২০১৩ সালে অয়ন শীল-শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জুটিকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। না হয়েছে চাকরি, না ফিরেছে টাকা। পুলিশ-প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার বৃথা গিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে হুগলির বলাগড়ের ইনছুড়া গ্রামের পাট ব্যবসায়ী বাসুদেব ঘোষ চাইছেন, শান্তনু-অয়নের সাজা হোক। একই দাবি অনেকেরই।
২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পান্ডুয়া পঞ্চায়েতের এগজ়িকিউটিভ অফিসার ছিলেন অয়ন। পুরনো মোটরবাইকে আসতেন। কাজে মতি ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মীরা। দু’-তিন বছর পরে উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী বিকাশ শেঠ জানান, সরকারি আধিকারিক, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে অয়নের সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘স্কুলে স্ত্রীর চাকরির জন্য গয়না বন্ধক রেখে অয়নকে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম ২০১৪ সালে। বিকাশ ভবনে ইন্টারভিউ হয়। অয়নের সঙ্গে ওখানে আধিকারিকদের সখ্য ছিল। তবে, চাকরি হয়নি। অয়ন টাকাও ফেরাননি। আরও অনেকের এই অবস্থা হয়। গ্রেফতার হওয়ায় শান্তি পেয়েছি।’’
২০১৪ সালে বলাগড় ব্লকের ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর-১ পঞ্চায়েতে বদলি হন অয়ন। এখানে এসইউভি বা দামি গাড়িতে আসতেন। উপপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কালেভদ্রে পঞ্চায়েতে আসতেন অয়ন। কাজে সমস্যা হত। ২০২০ সালে ইস্তফা দেন।
বলাগড়ের এক যুবক বলেন, ‘‘চাকরির আশায় সাত বছর আগে অয়নকে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। চাকরি, টাকা কিছুই পাইনি।’’ বাসুদেবের দাবি, বলাগড়ের এক তৃণমূল নেতা (অধুনা প্রয়াত) এবং শান্তনু তাঁকে চুঁচুড়ায় অয়নের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অয়নকে দু’লক্ষ টাকা দেন। পরে নিয়োগপত্র দেওয়ার নামে অয়ন আরও ৮ লক্ষ নেন। কিন্তু, প্রতারিত হতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যালয়ে জানিয়েছি। ’১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের অফিসে অভিযোগ জানাই। কিছুই হয়নি। টাকা চাওয়ায় অয়ন মারধরও করে।’’
চুঁচুড়ার আখনবাজারের একটি আবাসনের মালিক রাধিকারঞ্জন দত্ত জানান, বছর দশেক আগে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন অয়ন। পরে, ঘর বন্ধ করে চলে যান। তিনি বলেন, ‘‘অয়নের প্রভাবের জন্য ঘর খোলার সাহস পাইনি।’’ স্থানীয় কেটারিং ব্যবসায়ী বলরাম দাসের অভিযোগ, বছর তিনেক আগে জগুদাসপাড়ায় ফ্ল্যাটে অয়নের ছেলের জন্মদিনে নানা মাছের পদ, মাংস ছিল। সেই বাবদ বলরামের এক লক্ষ টাকার বেশি বিল হয়। অয়ন ২০ হাজার টাকার বেশি দেননি। সোমবার জগুদাসপাড়ায় অয়নের বাড়িতে কারও দেখা মেলেনি।
হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধান অমিত রায় বলেন, ‘‘বাম আমলে, ২০০৮-’০৯ সালে হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে ‘ডেটা এন্ট্রি’র কাজ করতেন অয়ন। তখনই চাকরির দুর্নীতিতে জড়ান। তদন্তকারীরা খোঁজ নিন।’’ সংসদের তৎকালীন চেয়ারম্যান, সিপিএম নেতা দুলাল ভৌমিকের বক্তব্য, ‘‘তখন ওএমআর শিট ছিল না। এজেন্সি মারফত ডেটা-এন্ট্রির কাজটুকু করতেন (অয়ন)। পরে তো মানিক ভট্টাচার্যের অফিসেও কাজ করেছেন।’’ ইডি-র অভিযোগ, অয়ন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতেও যুক্ত। এই আবহে বছর তিনেক আগে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার নিয়োগ-কেলেঙ্কারির নেপথ্যে মাথাদের সামনে আনার দাবি উঠছে। প্রশাসনের খবর, ওই পুরসভায় ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ৭২ জন নিয়োগপত্র পান। অস্বচ্ছতার কারণে রাজ্য সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে। যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, চাকরি ফেরতের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে যান। হাই কোর্ট আবেদন খারিজ করে। আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টে যান। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। অমিতের বক্তব্য, ‘‘নিয়োগে অস্বচ্ছতার বিষয়টি আমরাই রাজ্য সরকারের নজরে এনেছিলাম। রাজ্য সরকারই ব্যবস্থা নেয়।’’
দেবানন্দপুরে শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলে রূপকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ‘সুইসাইড নোটে’ অয়ন বাদেও রুদ্রনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় নামে এক জনের নাম ছিল। এই দাবি রূপকুমারের স্ত্রী মধুমিতার। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। স্বামী-শ্বশুর চাকরির জন্য অনেকের থেকে টাকা তুলে অয়ন, রুদ্রকে দিয়েছিলেন, শুনেছি। চাকরি হয়নি। ওঁরা টাকা না-ফেরানোতেই স্বামী-শ্বশুর আত্মঘাতী হন। ওঁদের শাস্তি হোক।’’