কেন আমরা ওঁদের জন্য মাস্ক এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করছি না? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের। এ দৃশ্য ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের। ছবি: পিটিআই।
২০১৬ সাল (১৩ অগস্ট)। স্থান: হায়দরাবাদ।
৭০তম স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের প্রস্তুতি চলছিল দেশ জুড়ে। হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে হাইটেক নগরী মধাপুরে ম্যানহোলে সাফাইয়ের কাজ করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে মারা যান তিন জন। বাঁচাতে নেমে মৃত্যু হয় আরও এক জনের। ঘটনাচক্রে, ওই বছরেই কলকাতা পুর এলাকার নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ পুরোপুরি যন্ত্রনির্ভর করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০২১ সাল (২৫ ফেব্রুয়ারি)। স্থান: কলকাতা।
দক্ষিণ কলকাতার কুঁদঘাটে সদ্যনির্মিত ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের ম্যানহোলে নেমে জলের তোড়ে ভেসে যান সাত শ্রমিক। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাত জনকেই তুলে আনে। কিন্তু তত ক্ষণে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
২০২৩ সাল (১ মে)। স্থান: আমদাবাদ।
গুজরাত হাই কোর্টের কড়া বার্তা: ম্যানহোলে কোনও মানুষকে (নিয়ম ভেঙে) নামালে, সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অর্থাৎ আইন, নির্দেশ এবং উদ্যোগের ফাঁক গলে এখনও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ম্যানহোলে মানুষ নামানোর অমানবিক ব্যবস্থা কমবেশি চালু রয়ে গিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক রাজ্যসভাকে জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২২— এই পাঁচ বছরে দেশে ৩০৮ জন সাফাইকর্মীর মৃত্যু হয়েছে ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে।
বিস্ময়ের কথা, ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে দেশে আইন তৈরি হয়েছিল এই ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই আইন অনুযায়ী, ম্যানহোল সাফাই, মলমূত্র সাফাই বা বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ কোনও মানুষকে দিয়ে করানো যাবে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে কাউকে ম্যানহোলে নামাতে হলেও সংশ্লিষ্ট সাফাইকর্মীর জীবন এবং স্বাস্থ্যের সব রকমের নিরাপত্তা দিতে হবে। সরকারি তথ্য এবং একের পর এক ঘটনা বলছে, নিকাশি ব্যবস্থায় যন্ত্রপাতির প্রয়োগ চালু হলেও ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ কর্মীদের পাঁকে নামিয়ে কাজ করানো হচ্ছে ন্যূনতম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই। তার ফলেই এত মৃত্যু।
সাফাইকর্মীদের জন্য তৈরি সরকারি কমিশনের রিপোর্ট বলছে, ১৯৯৩ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (২৯ বছরে) ৯৮৯ জন সাফাইকর্মী মারা গিয়েছেন ম্যানহোল বা নর্দমায় নেমে। এই তালিকায় সবার উপরে তামিলনাড়ু (২১৮ জন)। তার পরেই নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত (১৫৩)। কী অবস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায়? ২৯ বছরের মৃত্যুতালিকায় পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ১০ নম্বরে। মৃতের সংখ্যা এ রাজ্যে ২৩। দু’বছর আগে রাজ্যের রাজধানী শহরে চার জনের মৃত্যুর পর সরকার থেকে পুরসভা সকলেই নড়েচড়ে বসেছিল। তার পর এমন মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটেনি ঠিকই। কিন্তু ম্যানহোলে মানুষ নামানো কি বন্ধ হয়েছে?
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সাল থেকেই কলকাতা শহরে ম্যানহোলে নেমে নিকাশি নালা পরিষ্কার করার দিন শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে এখন নালা পরিষ্কার রাখার কাজ করি।’’ পুর কর্তৃপক্ষ এখন যন্ত্রের মাধ্যমে নিকাশি নালা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছেন। নর্দমা পরিষ্কারের যন্ত্র তৈরি করাতে পুরসভার ভাঁড়ারে অর্থ না থাকায় ২০১৬ সালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় নিকাশি নালা পরিষ্কারে নতুন পদ্ধতি চালু করতে।
কলকাতার বড়বাজার এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে ম্যানহোল পরিষ্কার চলছে। ছবি: পিটিআই।
এর পরেও ২০২১ সালে চার জনের মৃত্যুর মতো ঘটনা কী ভাবে ঘটল? মেয়র পারিষদ তারকের মতে, ‘‘এটি একটি দুর্ঘটনা। কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প (কেইপিআই)-এর কাজ চলাকালীন ড্রেনেজ পাম্পিংয়ের একটি ঢাকনা ভেঙে গিয়ে প্রবল জলের তোড়ে ভেসে যান শ্রমিকেরা।’’ মেয়র পারিষদ আরও জানাচ্ছেন, কিছু পরিস্থিতিতে নিকাশি নালায় না-নেমে উপায় থাকে না। তারকের কথায়, ‘‘কোনও কোনও ক্ষেত্রে নালায় নামিয়ে কাজ করাতে বাধ্য হই আমরা। তবে সে ক্ষেত্রে যে সাফাইকর্মী কাজে নামছেন, তাঁর সুরক্ষার সব রকম ব্যবস্থা করা হয়। সাফাইকর্মীর যাতে কোনও ভাবে প্রাণসংশয় না হয়, সে বিষয়টা সবচেয়ে আগে আমাদের মাথায় থাকে।’’
তবে এই ‘বিশেষ’ পরিস্থিতির জন্যও সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, কাউকে ম্যানহোলে নামাতে হলেও আগে যন্ত্রের সাহায্যে নিশ্চিত হতে হবে যে, সেখানে কার্বন ডাইঅক্সাইড বা মিথেনের মতো প্রাণঘাতী গ্যাস আছে কি না। তেমন কিছু নেই বলে নিশ্চিত হওয়ার পর যাঁকে বা যাঁদের ম্যানহোলে নামানো হবে, তাঁদের মাথা থেকে পা বিশেষ অ্যাপ্রনে ঢাকতে হবে। পায়ে গামবুট, হাতে দস্তানা রাখতে হবে। বিশেষ ধরনের মুখোশ লাগবে। কোমরে দড়ি বেঁধে নামানোও বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি রাখতে হবে অক্সিজেনের ব্যবস্থাও।
কোনও রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই সাফাইকর্মীদের ম্যানহোলে নামানো নিয়ে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষোভপ্রকাশ করে চলেছে দেশের শীর্ষ আদালত এবং বিভিন্ন রাজ্যের হাই কোর্ট। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি এমআর শাহ এবং বিআর গাভাইয়ের বেঞ্চ মন্তব্য করেছিল, ‘‘আমরা কেন ওঁদের জন্য মাস্ক এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করছি না? পৃথিবীর কোনও দেশে মানুষকে গ্যাস চেম্বারে মরতে পাঠানো হয় না! (এ দেশে) প্রত্যেক বছর চার থেকে পাঁচ জন করে মারা যাচ্ছেন।’’
বাংলায় গত দু’বছরে ম্যানহোলে নেমে মৃত্যুর একটিও ঘটনা ঘটেনি। তা হলে কি শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এখানে? কলকাতার বাইরে ছবিটা কেমন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তনের ছবি ধরা পড়েছে, তেমনই ধরা পড়েছে ফাঁকফোকরও। এমনকি, যে সাফাইকর্মীরা ম্যানহোলের নীচে নেমে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যেও নিজেদের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব লক্ষ করার মতো।
গত ১৮ মে হাওড়ার শিবপুরের কাজিপাড়ায় ম্যানহোলে নেমে কাজ করছিলেন এক দল সাফাইকর্মী। একটি দড়ির সিঁড়ি দিয়ে দুই কর্মী নীচে নামেন। রাস্তায় সিঁড়ি ধরে ছিলেন দু’জন। উপর থেকে দড়ি-বাঁধা বালতি নামিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। নীচে থাকা কর্মীরা তাতে পাঁক ভরে দিচ্ছিলেন। ভর্তি বালতি উপরে উঠে আসছিল। সাফাইদলের এক জন সন্টু জানা ম্যানহোল থেকে উপরে উঠে আসার পর তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এ কাজে তাঁদের বিপদের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করতেই সন্টুর তাৎক্ষণিক জবাব, ‘‘বিপদের কী আছে?’’ তার পর অবশ্য বললেন, ‘‘বিপদ আছে। কিন্তু আমরা কাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে ঢাকনাটা খুলে দিই। গ্যাসটা বেরিয়ে গেলে তার পর নীচে নামি।’’ কোনও মাস্ক বা অক্সিজেনের ব্যবস্থা সেখানে দেখা যায়নি।
হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা ‘বাকেট মেশিন’ বা ‘জেটিং কাম সাকশন মেশিন’ দিয়ে ভূগর্ভস্থ নালা পরিষ্কার করান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কিছু কিছু জায়গায় প্লাস্টিক, কাঠের টুকরো, বোতল— এমন ধরনের জিনিস আটকে গেলে মেশিনে কাজ হয় না। তখন কাউকে নামাতেই হয়। যিনি ওই বাধা (অবস্ট্রাকশন) সরিয়ে দেন। তার পর আবার যন্ত্র চালিয়েই কাজ হয়।’’ কলকাতার মেয়র পারিষদের মতো সুজয়েরও দাবি, যাঁদের ম্যানহোলে নামানো হয়, তাঁদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি বা প্রাণহানির সম্ভাবনা ঠেকাতে পুরসভা সতর্ক থাকে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখে।
শুধু কলকাতা বা হাওড়া নয়, যন্ত্রনির্ভর ম্যানহোল সাফাইয়ের ব্যবস্থা হয়েছে ব্যারাকপুর, সোনারপুর, দুর্গাপুর, চন্দননগর, সিউড়ি, বোলপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাটের মতো শহরেও। মালদহ শহরে ম্যানহোল থাকলেও এখনও প্রতি বছর বর্ষার আগে সাফাইকর্মীদের নামিয়েই নর্দমা পরিষ্কার করানো হয়। ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী অবশ্য জানালেন, যন্ত্রনির্ভর সাফাই ব্যবস্থা গড়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে সেখানেও। আনন্দবাজার অনলাইনকে কৃষ্ণেন্দু বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই মালদহ শহরের জন্য একটি মেশিন কিনেছি। পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ শুরু হবে। এ বছরের মধ্যে আরও কিছু যন্ত্র মালদহ শহরের জন্য কিনে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে।’’ তবে ইংরেজবাজার এলাকা নিয়ে তিনি একটু ‘সন্দিগ্ধ’। বললেন, ‘‘ওখানে বড় বড় ড্রেন। তাই মানুষ নামিয়েই কাজ করাতে হবে। তবু আমাদের মাথায় রয়েছে, এ ধরনের বড় ড্রেনের জন্যও কোনও ভাবে যন্ত্রের ব্যবস্থা করা যায় কি না।’’
খোলা ড্রেন থেকে আবর্জনা তোলা হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরে। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
ম্যানহোল নেই শিলিগুড়ি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের মতো শহরে। আসানসোলেও নেই বললেই চলে। সেখানে ব্রিটিশ আমলের কিছু ম্যানহোল রয়ে গেলেও শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ছোট-বড় নর্দমার উপরেই নির্ভরশীল। সাফাইকর্মীদের নামিয়েই সেগুলি পরিষ্কার করা হয়। বড় নালা পরিষ্কার করতে পুরসভার ‘গ্যাং’ রয়েছে। এক একটি গ্যাং-এ থাকেন ৬ জন করে সাফাইকর্মী। এই সব গ্যাং ঘুরে ঘুরে শহরের নালা পরিষ্কার করে। আর এক ধরনের গ্যাং আছে আসানসোলে, যাতে ২০ জন করে থাকেন। নাম ‘পুজো গ্যাং’। পুজোপার্বণের মতো বড় উৎসবের সময় এই গ্যাং কাজ করে।
রাজ্যের পুরনো শহর মুর্শিদাবাদ বা বর্ধমানের নিকাশি ব্যবস্থাও মূলত রাস্তার ধারের স্ল্যাব-ঢাকা নালা নির্ভর। নালার গভীরতা তিন-চার ফুটের বেশি নয়। এই ব্যবস্থাই রয়েছে বারাসত, বারুইপুর-সহ আরও অনেক শহরে। এগুলির ক্ষেত্রে ম্যানহোল-আইন বা ম্যানহোল-নির্দেশিকা প্রযোজ্য নয়। তার একটা বড় কারণ, বাতাসের সংস্পর্শে থাকা এই সব নর্দমায় বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকার সম্ভাবনা তেমন থাকে না। তবে এই ধরনের নর্দমা পরিষ্কারের ক্ষেত্রেও যন্ত্র ব্যবহারের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যেমন উত্তরপাড়া পুরসভা। এই পুরসভায় স্ল্যাব ঢাকা নর্দমা পরিষ্কারেও যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। চেয়ারম্যান দিলীপ যাদবের কথায়, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি এক জনকেও যাতে পাঁকে নামাতে না হয়। বড়সড় কোনও গোলমাল না হলে আমরা যন্ত্র দিয়েই সবটা করার চেষ্টা করি।’’
নিকাশি নালা পরিষ্কার করতে রাজ্যের শহরে শহরে যন্ত্রের ব্যবহার যে হচ্ছে এবং বাড়ছে, তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু এখনও অনেক শহরে নালায় নেমেই সাফাইকর্মীরা কাজ করেন। এঁদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় প্রশাসন কি যথেষ্ট সাবধানী? জেলায় জেলায় ছবি কিন্তু সে কথা বলছে না। বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর সম্ভাবনা যদি না-ও থাকে, নর্দমায় নেমে দিনের পর দিন কাজ করলে নানা ধরনের রোগের আশঙ্কা প্রবল। চর্মরোগ থেকে শুরু করে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সাফাইকর্মীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। জেলায় জেলায় আনন্দবাজার অনলাইনের চোখে যে ছবিটি ধরা পড়েছে তা হল, মূলত খালি গায়ে নালায় নামেন কর্মীরা। মাস্কের ব্যবহারও নেই বললেই চলে। এ নিয়ে সাফাইকর্মীরা নিজেরাও খুব কম সচেতন। সরকারি বা প্রশাসনিক উদ্যোগ এখনও যথেষ্ট নয়। ‘আইন বাঁচিয়ে’ চলার দিকেই নজর বেশি।
এই সমস্যার আর একটি দিকও রয়েছে। সংবিধান দেশের সব নাগরিককে সমান দেখলেও দেশ-সমাজের একটা বড়সড় অংশ এখনও তা দেখে না। সাফাইকর্মীরা সমাজের যে অংশ থেকে আসেন, যুগ যুগ ধরে সেই অংশের প্রতি বাকি সমাজের তীব্র অবজ্ঞা, অবহেলা, এমনকি, ঘৃণাও রয়েছে। অস্পৃশ্যতার মতো সমস্যা ভারতীয় সমাজ থেকে দূর হয়নি। বিশেষত উত্তর বা পশ্চিম ভারতের সাফাইকর্মীদের সমস্যা সম্পর্কিত মামলায় এই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের মতামতেও। এঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনই কি পড়ছে রাজ্যে রাজ্যে ম্যানহোলে মৃত্যুর মিছিলে? এককথায় ‘না’ বলার উপায় নেই বোধহয়!
(গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)