উদ্বেগ: ভুলে ভরা রেশন কার্ড।
নামে যে কিঞ্চিৎ যায় এবং আসে, এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ডোমকল-ইসলামপুর।
হাইকোর্টে ঘনঘন মামলা করার বাতিক ছিল ইসলামপুরের মোল্লাডাঙার এক মাতব্বরের। গ্রামের লোক কোনও রাখঢাক না রেখেই তাঁর নাম রেখেছিলেন হাইকোর্ট চাচা।
ভোটার থেকে আধার এমনকি রেশন কার্ডেও তিনি ছিলেন হাইকোর্ট মণ্ডল। এনআরসির আঁচড়ে তিনি এখন মরিয়া হয়ে ফিরতে চাইছেন পুরনো নাম আসরফে। এত দিনে আসরফ নামটাই ভুলে গিয়েছেন তিনি। সংশোধনের ফর্ম ৮ সামনে নিয়ে মাথা চুলকোচ্ছেন তিনি, ‘‘আর হাইকোর্টে যাব না কিন্তু আসরফ লিখলে আবার চিনতে পারবে তো লোকে!’’
ডোমকলের বিডিও পার্থ মণ্ডল দিন কয়েক আগে একটি সভায় বলেছেন, ‘‘কোনও চিন্তা নেই, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। ভোটার তালিকা বা খাদ্য সুরক্ষার কার্ডের ভুল সংশোধনের জন্য অনলাইন ও অফ লাইনে আবেদন করা হয়। যাঁদের ভুল আছে, আবেদন করলেই আমরা গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করব।’’
ডোমকলের কুপিলা গ্রামের মালেক শেখ বলছেন, ‘‘গুরুত্ব দিয়ে কী হল! আধার কার্ডে ৩৯ বছরের জায়গায় আমার বয়স লেখা ছিল ১২ বছর। সংশোধনের জন্য দিলাম বটে, হল অন্য বিপদ! মালেক শেখ বদলে এ বার লিখে দেওয়া হয়েছে মাশেখ শেখ। এ বার তো সটান ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে!’’ তাঁর গলায় স্পষ্ট হতাশা। মালেক একা নন, গোটা জেলা জুড়ে বিভিন্ন কার্ডে এমন অনেক অদ্ভুত নামের ছড়াছড়ি। যার মূলে সরকারি দফতরের গাফিলতি।
ডোমকল পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মাফিকুল ইসলামের নামের জায়গায় বসে গিয়েছে শফিকুল ইসলাম। মাফিকুলের দাবি, এতদিন বিষয়টি নিয়ে খুব একটা ভাবেননি তিনি। কিন্তু এখন সন্তানদের কথা ভেবেই কার্ডে নামের ভুল নিয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে তাঁর। একই ভাবে আধার কার্ডের ভুল নিয়ে ঘুম ছুটেছে জলঙ্গির বাসিন্দা নুর ইসলামের। তিনি বলছেন, ‘‘আধার কার্ডে ভুল হয়েছে সরকারি দফতরের জন্য। আর তার মাসুল দিতে হচ্ছে আমাদের। এখন ভুল সংশোধন করার জন্য হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও কোন কাজ হচ্ছে না। ডোমকলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কাজ চলছিল, সেটাও বন্ধ। পোস্ট অফিসে এক দিন টোকেন দিয়েই শেষ। আমাদের কথা শোনার কেউ নেই।’’
ভুল নিয়ে যে সাধারণ মানুষ কি নাজেহাল অবস্থার মধ্যে আছেন তা চাক্ষুষ করা যায় আধার কার্ড কেন্দ্রগুলিতে গেলেই। সেখানে লম্বা লাইন, কনকনে ঠান্ডায় রাতেও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ। এমনকি এলাকার বিভিন্ন কম্পিউটার সেন্টার গুলিতেও অনলাইনে সংশোধনের আবেদন করার জন্য ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। একটি কম্পিউটার সেন্টারের মালিক মিনহাজুল আবেদিন বলেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের অসহায় অবস্থা দেখে আমাদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই এসে হাত-পা জাপটে ধরছেন। ভাবছেন আমরা ঠিক করতে পারব। সাধ্য মতো তাঁদের বোঝাচ্ছি।’’