রফিকুল শেখের বিরুদ্ধে ৭ বছরের পুত্রসন্তানকে খুনে অভিযোগ উঠেছে। —নিজস্ব চিত্র।
নিজের ৭ বছরের পুত্রকে ধানের জমিতে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করেছে খুন করেছেন। ওই জমিতেই পুত্রের দেহ পুঁতে রেখেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় ফোন করে এক আত্মীয়কে এমনই খবর দিয়েছেন বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় উস্থি থানা এলাকার এক যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ। শনিবার ওই ক্ষেত থেকে নাবালকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। খুনের পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। পরে তাঁকে পার্ক সার্কাস এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তদন্তে নেমে আগেই নাবালকের ঠাকুরমা, জেঠিমা এবং জেঠুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ নাবালকের উপর তাঁরা অত্যাচার করতেন বলে অভিযোগ। ধৃতদের রবিবার ডায়মন্ডহারবার আদালতে হাজির করানো হবে৷
রবিবার তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যান ডায়মন্ডহারবারের এসডিপিও মিতুন দে৷ তিনি বলেন, ‘‘নাবালক খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রফিকুল শেখের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ৷’’
পুলিশ সূত্রে খবর, উস্থির দেউলা নাজরার ডোমপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই নিহত নাবালকের নাম রোহিত শেখ। নাবালকের খুনের পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত বাবা রফিকুল শেখ। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। এর পর তাঁকে কলকাতার পার্ক সার্কাস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরিবার এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রফিকুল এবং তাঁর স্ত্রী রুকসানা শেখের সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে৷ বিশেষ কোনও কাজকারবার ছিল না রফিকুলের৷ কখনও ভ্যান চালাতেন, কখনও আবার রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন৷ মাঝেমধ্যে ক্ষেতমজুরের কাজও করতেন তিনি৷ অভাবের সংসারে প্রায়শই অশান্তি লেগে থাকত৷
রুজিরোজগারের টানে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন রুকসানা৷ অভিযোগ, তাঁকে নিয়মিত মারধর করতেন রফিকুল৷ স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই বিবাহবিচ্ছেদের মামলা রুজু করেন তিনি৷ সম্প্রতি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। দম্পতির একটি করে পুত্র ও কন্যা রয়েছে৷ আদালত দু’সন্তানের লালনপালনের দায়িত্ব দেয় তাঁকে৷ কিন্তু নাবালক পুত্রকে জোর করে নিজের কাছে নিয়ে যান রফিকুল৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রোজগারপাতি বিশেষ ছিল না রফিকুলের। তা নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে মানসিক স্থিরতা ছিল না তাঁর। অভাবের সংসারে কোনও মতে দিন গুজরান হত রফিকুলদের। অভাব অনটনের জেরে মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন তিনি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৭ বছরের রোহিতের উপর মারধর, অত্যাচার করতেন তাঁর বাবা, জেঠু, জেঠিমা এবং ঠাকুরমা৷ শনিবার রাতে নাবালককে গ্রামের একটি ধানের জমিতে নিয়ে যান তিনি। এর পর সেখানেই নাবালককে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। এর পর তার দেহটি ধানজমিতে পুঁতে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
রফিকুলের এক নিকটাত্মীয়ের দাবি, নাবালক পুত্রকে খুন করে জমিতে পুঁতে রাখার কথা তাঁকে ফোন করে জানান অভিযুক্ত।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ফোন পেয়ে ক্ষেতের জমি খুঁড়ে নাবালকের দেহ উদ্ধার করেন রফিকুলের পরিবারের লোকজন। এর পর বাণেশ্বরপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। খবর পেয়ে নাবালকের দেহ উদ্ধার করে রবিবার ডায়মন্ড হারবার পুলিশ মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনায় উস্থি থানায় গিয়ে প্রাক্তন স্বামী এবং শশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নাবালক পুত্রকে খুনের অভিযোগ করেন রুকসানা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তের খোঁজে নানা এলাকায় খোঁজ করার পাশাপাশি তদন্তে নেমেছে উস্থি থানার পুলিশ। পরে তাঁকে কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।