কোচবিহারের নাটাবাড়িতে মঙ্গলবার টাকা ফেরত দিচ্ছেন তৃণমূল নেতা ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত সদস্য ভবেশ কার্জি (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
‘কাটমানি’ কাণ্ডে প্রায় প্রতিদিনই হেনস্থা হচ্ছেন শাসক দলের কোনও না কোনও নেতা। সেখানে টাকা না পেয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল রাজপুর-সোনারপুর পুর-এলাকার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। দীপক ঘোষ নামে ওই নেতা অভিযোগ মানেননি। কোচবিহারের নাটাবাড়িতে জনতার চাপে মঙ্গলবার প্রায় দু’লক্ষ টাকা ফেরত দেন এক নেতা। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে টাকা ফেরত চেয়ে পোস্টার-ফ্লেক্স পড়ে। বিক্ষোভও হয়।
সোনারপুরের ঘটনাটি সোমবারের, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপল্লি এলাকার। সেখানে হাইড্রেন তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস পালের বক্তব্য, তিনি বাড়ির নিকাশি নালা হাইড্রেনের সঙ্গে জুড়ে দিতে অনুরোধ করেছিলেন কর্মরত পুরকর্মীদের। তাঁর অভিযোগ, সে বাবদ ওয়ার্ড উন্নয়ন কমিটির সদস্য দীপক ঘোষ তাঁর কাছে ২০ হাজার টাকা চান। টাকা দিতে না চাওয়ায় দীপকবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে এবং তাঁর বোনকে মারধর করেন। দীপকবাবুর দাবি, মারধর করা হয়নি। দেবাশিসবাবুই পুরকর্মীদের উপরে অবাঞ্ছিত ভাবে ‘চাপ’ দিচ্ছিলেন। দু’পক্ষই পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে। তদন্ত চলছে।
কোচবিহারের নাটাবাড়ির ঘরঘরিয়া গ্রামে সরকারি প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে ‘কাটমানি’ নেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুকান্ত বন্দ্যো এ দিন ১ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা এলাকার কিছু বাসিন্দাকে ফেরত দেন। সুকান্তের দাবি, ‘‘দলের নেতাদের কথাতেই টাকা নিয়েছি। এখন হাতে টাকা নেই। জমি বন্ধক দিয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছি।’’ সুকান্তের ঘনিষ্ঠ আর এক নেতা ভবেশ কার্জি জানিয়েছেন, এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের কাছ থেকে আরও ২ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা পাবেন। ২২ জুলাই বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ের কথায়, ‘‘ওখানে কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে বিজেপির উস্কানি থাকতে পারে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে ‘কাটমানি’ ফেরত দেওয়া নিয়ে বিরোধের জেরে এ দিন তৃণমূলের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে প্রায় ঘণ্টাখানেক এলাকার প্রাথমিক স্কুলে আটকে রাখা জনতা। ‘কাটমানি’ ফেরত চেয়ে এ দিন সংঘর্ষ হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনার বৃদ্ধপাড়া গ্রামে। জখম হন এক তৃণমূল নেতা ও এক বিজেপি কর্মী। তৃণমূলের কালনা ১ ব্লক সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহরায়ের দাবি, ‘‘বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে ওই গ্রামে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদারের বক্তব্য, ‘‘গ্রামের মানুষ প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। অরাজনৈতিক ঘটনাতে রাজনীতি খুঁজছে তৃণমূল।’’ জেলার বুদবুদ ব্লকের দেবশালায় একই কারণে দু’পক্ষের সংঘর্ষে তিন জন আহত হন।
সরাসরি ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ না হলেও, একটি রাস্তায় কম টাকার কাজ করে বেশি টাকার কাজ হয়েছে বলে দাবি করার অভিযোগে এ দিন তেতে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর। তেলেনিপাড়ার বাসিন্দারা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান। অফিসে তালা দেওয়া হয়। আটকে পড়েন প্রধান-সহ পঞ্চায়েতের কর্মী ও আধিকারিকেরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘণ্টাখানেক পরে তালা খোলা হয়। বারাসত-ব্যারাকপুর রোডেও অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। পঞ্চায়েত প্রধান অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘রাস্তাটি জেলা পরিষদ করছে। এতে আমাদের ভূমিকা নেই।’’ কোলাঘাটের পানশিলা এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি ‘ফ্লেক্সে’ কোলাঘাট এলাকায় সরকারি এবং বেসরকারি কাজে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। ‘কাটমানি’ দিয়ে যদি কেউ ‘ঠকে’ থাকেন, সেটা ফেরত পেতে তাঁকে ‘নবান্ন’-এ যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ওই ফ্লেক্সে ।