Crime

POCSO: নাবালিকা-নিগ্রহে ফাঁসানোয় শাস্তি, মুক্তি অভিযুক্তের

নাবালিকা-নিগ্রহের ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকার যে-দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিল, অভিযোগকারিণীকে তা-ও ফেরত দিতে বলেছে আদালত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

যৌন নিগ্রহ থেকে শিশুদের বাঁচাতে বছর দশেক আগে ‘প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট’ (পকসো) প্রণয়নের সময় থেকেই এই আইনের উপযোগিতার পাশাপাশি এর সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে সর্বস্তরে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল। এখনও হচ্ছে। সেই অপব্যবহারের প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত মিলল বারুইপুরের একটি মামলায়। নিজের নাবালিকা সৎমেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারের পাঁচ বছর পরে, বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিশেষ আদালতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির আইনজীবী শিউলি সাউ জানান, মিথ্যা অভিযোগে তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছিল বলে নিজের রায়ে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক উমেশ সিংহ।

Advertisement

এই পাঁচ বছরে কলকাতা হাই কোর্টে ওই ব্যক্তির জামিনের আর্জি তিন-তিন বার বাতিল হয়েছে। এত দিনে নিম্ন আদালত তাঁকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি এই মামলার অভিযোগকারিণীকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে এবং তাঁর ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে। শুধু তা-ই নয়, নাবালিকা-নিগ্রহের ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকার যে-দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিল, অভিযোগকারিণীকে তা-ও ফেরত দিতে বলেছে আদালত।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালে। বারুইপুরে রেলের জমিতে তৈরি বস্তির এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে সৎমেয়ের উপরে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। মেয়েটির মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে রেল পুলিশ। শিউলিদেবী জানান, ২০১৬ সালে তাঁর মক্কেল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই থেকে তিনি জেলবন্দি ছিলেন। আদালত সূত্রের খবর, বিচার পর্ব চলাকালীন ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট এবং অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচারকের পর্যবেক্ষণ, পুরোপুরি মিথ্যা মামলায় ওই ব্যক্তিকে ফাঁসানো হয়েছিল। সেই সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই তিনি এই রায় দিয়েছেন।

Advertisement

শিশুদের যৌন নিগ্রহ থেকে রক্ষা করতে ২০১২ সালে চালু হওয়া পকসো আইনে মামলা হলে সহজে জামিন মেলে না। দোষ প্রমাণিত হলে কড়া সাজার সংস্থানও রয়েছে। আইনজীবীদের বক্তব্য, ভবিষ্যতের নাগরিকদের সুরক্ষায় এই আইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকায় অনেক ক্ষেত্রে এর অপব্যবহার হচ্ছে বলেও অভিযোগ। আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানান, পকসো আইনের অপব্যবহার নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠছে। এই মামলায় সেই অপব্যবহার প্রমাণিত হয়েছে। আইনি হাতিয়ারের এই ধরনের অপব্যবহার চলতে থাকলে শুধু যে নিরপরাধ ব্যক্তির জীবন নষ্ট হবে তা-ই নয়, প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে যথার্থ নিগৃহীতাদেরও। আইনজীবীর কথায়, ‘‘আশার কথা হল, মিথ্যা মামলায় ফাঁসালে যে রেহাই মিলবে না, সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে এই রায়ে।’’

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, পকসো আইনের অপব্যবহার নিয়ে বহু দিন ধরে আলোচনা চলছে। বহু ক্ষেত্রে প্রতিবেশী, আত্মীয়দের মধ্যে বিবাদেও এই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, অনেক ক্ষেত্রে বিবাদের সময় বিরুদ্ধ পক্ষকে এই ধরনের মামলায় ফাঁসানোর দুরভিসন্ধি থেকে বাচ্চা মেয়েদের এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বয়স্ক মানুষদেরও এই মামলায় অভিযুক্ত করার চেষ্টা চলছে। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘এই অপব্যবহার আজ নয়, অন্তত পাঁচ-ছ’বছর আগে থেকেই হচ্ছে। এই বিষয়ে পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার সচেতনতা প্রয়োজন। নইলে এমন অপব্যবহার চলতে থাকলে ৪৯৮-এর মতো এই আইনও এক সময় নির্বিষ হয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement