ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সভায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
সরকারি প্রকল্পের টাকায় ভাগ চাইলে হবে এফআইআর। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে দলীয় কর্মী মহা সম্মেলনের মঞ্চে সরকারের নানা প্রকল্পের কথা শোনাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কথায় কথায় এল ‘সমব্যথী’ প্রকল্পের কথা। কারও মৃত্যু হলে এই প্রকল্পে অন্ত্যেষ্টির জন্য মৃতের পরিবারকে দু’হাজার টাকা দেয় রাজ্য সরকার। প্রকল্প বিশদে ব্যাখ্যা করার পর মমতা বলেন, ‘‘এই দু’ হাজার টাকা আপনার প্রাপ্য। তার থেকে এক পয়সা কম কেউ নেবেন না। যদি দু’হাজার টাকার থেকে কম কেউ দেয় তাহলে আমাকে সরাসরি চিঠি লিখবেন। জেলাশাসককে চিঠি লিখবেন। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে এফআইআর করবেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, জন্ম থেকে মৃত্যু— সরকার মানুষের পাশে রয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি টাকার একাংশ ‘কাটমানি’তে রূপান্তরিত হয়ে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের পকেটে যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিরোধীদের অভিযোগ প্রকাশ্যে উড়িয়ে দিলেও তাদের এই সমালোচনা যে আংশিক সত্যি তা মানেন নেত্রী নিজেও। বিশেষ করে পঞ্চায়েতের পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে টাকা দেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে জঙ্গলমহলে। এখানে সমব্যথী-সহ অন্য প্রকল্প থেকে সরকারি টাকার ভাগ আদায়ের পাশাপাশি, ফর্ম পূরণ করতেও টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ দিন দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতার নির্দেশ, ‘‘আপনাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসাবে বিনা পয়সায় ফর্ম ফিল আপ করে দেবেন। কোনও টাকা নেবেন না।’’
এরপর জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে মমতার আবেদন, ‘‘ফর্ম ফিল আপ করাতে গিয়ে কেউ দয়া করে কারও কাছে একটি পয়সাও দেবেন না।’’ পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বাংলা সহায়তা কেন্দ্র (বিএসকে) তৈরি করা হয়েছে। সেখানে গিয়েও আবেদনপত্র পূরণ করার কথা বলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি সরকারি অফিসারদের কাছে অনুরোধ করব, যদি কেউ দরখাস্ত লিখতে না পারেন, তাঁদের দরখাস্ত লিখতে দয়া করে একটু সাহায্য করে দিন।’’ পুর-এলাকাতেও পুর-নাগরিকদের সাহায্যে কাউন্সিলরদের হেল্প ডেস্ক চালু করার নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার হলে পুরসভার কাউন্সিলরদের বলব ‘মে আই হেল্প ইউ’ লিখে একটি চেয়ার টেবিল নিয়ে রাস্তায় বসবেন। দরখাস্ত নিজে লিখে দেবেন। গ্রামসভা ও পঞ্চায়েতেও এমন করতে হবে।’’ বিজেপির রাজ্য নেতা সুখময় শতপথীর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কাটমানির জন্য অভিযোগ করতে বলছেন! অথচ তাঁর দল ও সরকার পুরোটাই তো কাটমানিতে চলছে। এ যেন চোরের মায়ের বড় গলা!’’
সামনে বর্ষাকাল। আসছে পঞ্চায়েত ভোটও। তাই দলের পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘‘গ্রামসভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে তৃণমূলের যাঁরা আছেন, আমি দলের এই সভা থেকে তাঁদের নির্দেশ দিচ্ছি, মানুষের কাজ ফেলে রাখবেন না। বর্ষা আসার আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে কাজ শুরু করে দিন। আর আমি পঞ্চায়েত ভোট কবে ঘোষণা করে দেব। তখন কাজ করার সুযোগ পাবেন না। সুতরাং কাজ করুন চটপট। আর মানুষ দেখুক ঝটপট। কাজের মধ্যে দিয়ে চমকাতে হবে। মানে কাজের চমকানি। কাজে আলো আসবে। কাজে রোশনি আসবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী চান, চিরকাল কাজের আলোয় ভাসবে জঙ্গলমহল। হাসবে জঙ্গলমহল।