দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোর উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুমন বল্লভ
দীপাবলির আবহে তাঁর সরকারের উপর থেকে অন্ধকার দূর করতে সচেষ্ট হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! এ বার কালীপুজোর উদ্বোধনের মঞ্চকে বেছে নিলেন রাজনৈতিক বার্তার জন্য।
দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূল কাউন্সিলর রাজীব দেবের কালীপুজোর উদ্বোধনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী-প্রধান শেক্সপিয়র সরণির ওই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, এমন হলে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তিনিই নেবেন। পাশাপাশিই আরও যা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার মূল নির্যাস সারদা থেকে খাগড়াগড়, সব ঘটনাতেই নির্দিষ্ট স্বার্থের জন্য তাঁকে এবং সরকারকে হেয় করা হচ্ছে। তাঁর ঘোষণা, জনগণই পথে নেমে এই চক্রান্তের জাল ছিন্ন করবে।
দীপাবলি উৎসবের ওই মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, “শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। তাঁদের বলছি, অসুবিধা হলে বলবেন। আমরা আপনাদের সুরক্ষা দেব।” তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, সারদা-কাণ্ডের তদন্তে কয়েক জন ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছেন, এক শিল্পপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আবার মমতা-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে সরব। এই ঘটনাপ্রবাহই মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের কারণ বলে শাসক দলের ওই অংশের মত।
সারদা-কাণ্ডে চেনা সুরই বজায় রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “সারদা শুরু হয় সিপিএম আমলে। আমরা বরং, সারদায় টাকা রেখে প্রতারিত পাঁচ লক্ষ মানুষকে টাকা ফেরত দিয়েছি। টাকা থাকলে আরও প্রতারিতকে টাকা ফেরত দিতাম। এখন সিবিআই এবং ইডি ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরালে খুশি হব।” সারদা কাণ্ডে গঠিত শ্যামল সেন কমিশনের মেয়াদ ফুরনোর এক দিন আগে এই কথা বলে আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা চালিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই সচরাচর তিনি যা করেন না, সেই প্রথা ভেঙে পুজোর উদ্বোধনে রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রতিবাদেও ফের সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “অপরাধীদের শাস্তি আমরা চাই। কিন্তু একটা অপরাধের সঙ্গে গোটা সম্প্রদায়কে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। আমরা এ সব বরদাস্ত করব না!”
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিনই মন্তব্য করেছেন, শ্যামল সেন কমিশনের ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হচ্ছে। তাঁর মতে, কমিশনের এই পরিণতিই প্রত্যাশিত ছিল। এখন সারদা-কাণ্ডে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর দায়িত্ব কেন্দ্রকে নিতে হবে বলেও দাবি করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবু।
বিরোধী দলনেতা এ দিন বলেন, “শ্যামল সেন কমিশনের স্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে! আমরা আগেই বলেছিলাম, আসল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য সরকার এটা করেছে। আমরা তখনই বলেছিলাম, এ ভাবে অপরাধীদের বেআইনি হস্তান্তরের (সম্পত্তি) সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।” সূর্যবাবুর মন্তব্য, “কমিশন যেটা করছিল, তাকে বলে পরের ধনে পোদ্দারি! একটাও চিট ফান্ডের টাকা উদ্ধার করে তারা ফেরত দেয়নি। জনগণের করের টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছিল।” তাঁর দাবি, ইডি, সেবি এবং সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির উপরেই এখন দায়িত্ব দোষীদের চিহ্নিত করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়া। সূর্যবাবুর কথায়, “প্রধানমন্ত্রী এ রাজ্যে প্রচারে বলেছিলেন, দোষীরা ছাড় পাবে না এবং লগ্নিকারীরা টাকা ফেরত পাবেন। এখন সেই কথা রক্ষার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।” আবার এ দিনই জঙ্গিপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় রঘুনাথগঞ্জে দলের বিক্ষোভ সমাবেশে কটাক্ষ করেন, “প্রথম এ রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর দিকে দুর্নীতির আঙুল উঠেছে। সে দিন দূরে নয়, যে দিন মানুষ দেখবে, জয়ললিতার মতো জেলে যেতে হচ্ছে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও!”
কমিশনের মেয়াদ আর বাড়বে কি না, এক দিন আগেও তা অস্পষ্ট। তবে আজ, বুধবার শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে সিবিআই, ইডি এবং সিটের প্রতিনিধিদের। তদন্তের স্বার্থে সিটের সমস্ত নথি সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ায় কমিশনের কিছু কাজ আটকে গিয়েছে। সে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সহ সিটের অন্যতম কর্তা তথা বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে ডাকা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রের খবর। এ দিন ফের অবস্থান-বিক্ষোভ হয়েছে ধর্মতলা চত্বরে ও কমিশনের সামনে। ছিলেন কয়েকশো এজেন্ট ও সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে সকলের টাকা ফেরতের দাবিতে ওই বিক্ষোভ রুখতে কমিশনের দফতরের সামনের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় প্রশাসনকে।