বেহাল দশা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ঘোষপাড়া রোডের।—নিজস্ব চিত্র।
প্রকাশ্যে কোনও অভিযোগে সরব হওয়া যাবে না। অপ্রিয় প্রশ্ন করা যাবে না। এমনকী, এলাকার কোনও সমস্যার কথা বলে নিজেদের সরকারের কাছে বিহিত চাইলেও বিপত্তি! শাসক দলের অন্দরে এমন ফরমানের মধ্যেই সমস্যা-সঙ্কুল ব্যারাকপুর ও কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে আজ, শুক্রবার পা রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কালীঘাট থেকে মুখ্যমন্ত্রীর আজ কল্যাণী যাওয়ার কথা সড়ক পথে। সেখানে তিন জেলার কর্মীদের নিয়ে দলীয় সভা সেরে সড়ক পথেই আসবেন ব্যারাকপুরে। পুলিশের ফুটবল টুর্নামেন্টে পুরস্কার বিতরণ সেরে তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা। আগে অবশ্য কথা ছিল, বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে ফিরেই তিনি সোজা চলে যাবেন ব্যারাকপুর। সেখানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অতিথি শালায় রাত কাটিয়ে পরদিন ওখান থেকেই কল্যাণী। কিন্তু এ দিন দিল্লি থেকে কলকাতার উড়ান ধরার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর রাত্রি যাপনের পরিকল্পনায় পরিবর্তন হয়েছে। সড়ক পথে কল্যাণী যাত্রায় অবশ্য এখনও কোনও পরিবর্তন নেই।
আর এই সড়কের হালই এখন শোচনীয় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। বিশেষত, ব্যারাকপুর থেকে নৈহাটি যাওয়ার মূল রাস্তা ঘোষ পাড়া রোডের বহু অংশে গাড়ি চলছে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জাহাজের মতো! কোথাও ডোবার মতো গর্ত, কোথাও এক দিক থেকে অ্যাসফল্টের আস্তরণ পুরোটাই উঠে এসেছে। কোথাও কোথাও জোড়াতালি হয়েছে, তাতে যদিও হাল ফেরেনি। অথচ এই রাস্তার কথাই বিধানসভায় তুলতে গিয়ে কয়েক দিন আগে কী বিড়ম্বনাই না হয়েছে নোয়াপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসুর! ভাঙাচোরা রাস্তায় এলাকার মানুষ নাজেহাল, কবে সমাধান হবে, এই নিরীহ প্রশ্ন পূর্তমন্ত্রীর উদ্দেশে তুলেছিলেন শাসক দলের বিধায়ক। সতীর্থেরা তাঁকে সমঝে দিয়েছেন, এ ভাবে প্রশ্ন করে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে নেই! মঞ্জুদেবীর হাল দেখে তৃণমূলের অন্য অনেক বিধায়কই দমে গিয়েছেন। অধিবেশনের শেষ দিনে তাঁদেরই এক জন বলছিলেন, “এলাকার সমস্যার কথা বিধানসভায় বলার জন্যই তো মানুষ নির্বাচিত করে পাঠিয়েছে! আর কোথায় বলব?”
বাম জমানায় শাসক ফ্রন্টের পরিষদীয় বৈঠকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্নে জেরবার করতেন বাম বিধায়কেরা। অধিবেশনেও প্রশ্নোত্তর বা উল্লেখ-পর্বে এলাকার সমস্যাই উঠে আসত বারংবার। তৃণমূলের সাড়ে তিন বছরের জমানায় দলের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে অন্য একাংশ যত সরব হচ্ছেন, ততই মুখ বন্ধের ফতোয়া জারি হচ্ছে। তার রেশ যে ভাবে বিধানসভাতেও এসে পড়ছে, তাতে শাসক দলেরই একাংশ উদ্বিগ্ন। কেউ কেউ বলছেন, এর পরে তা হলে বিধানসভায় প্রশ্ন বা উল্লেখ করার পর্বই বাদ দিয়ে দেওয়া হোক!
মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য বিস্তর হোর্ডিং পড়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। তা দেখে বাসযাত্রী, অটো-চালকরা বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী এক বার আসুন এই রাস্তা দিয়ে। তা হলে নিজেই বুঝবেন যন্ত্রণা কোথায়!” বিধায়কের বিড়ম্বনার খবর অবশ্যই তাঁদের জানা নেই। জানা নেই, মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার কথা কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে। যে রাস্তার হাল তুলনায় অনেক ভাল। তবু নিত্য যন্ত্রণার ভুক্তভোগীদের আশা, গাড্ডায় পড়লে মুখ্যমন্ত্রীই বুঝবেন!
গাড্ডায় আসলে পড়ে রয়েছেন শাসক দলের নেতারাই। শিল্পাঞ্চলের এক বিধায়কের কথায়, “সামনে পুরভোট। আমরা মুখ বন্ধ রাখলেও মানুষ তো চুপ করে বসে থাকবে না! এর চেয়ে সমস্যার সমাধানে নজর দিলে ভাল হতো।”