ছোঁয়াচ এড়াতে মদনকে দূরে ঠেলছেন মমতা

বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। সারদা ছুঁলে? আপাতত উত্তর জানা নেই কারও। তবে ছোঁয়ার আগেই তার অভিঘাত টের পেয়ে সন্দেহের তালিকায় থাকা মন্ত্রী-নেতাদের ছোঁয়াচ এড়াতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন, মদন মিত্র। রাজ্যের বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী মমতার ঘনিষ্ঠ-ব্রিগেডের এক জন বলেই রাজ্যবাসীর কাছে পরিচিত। কিন্তু এখন আর তা বলতে নারাজ নবান্নের শীর্ষমহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। সারদা ছুঁলে?

Advertisement

আপাতত উত্তর জানা নেই কারও। তবে ছোঁয়ার আগেই তার অভিঘাত টের পেয়ে সন্দেহের তালিকায় থাকা মন্ত্রী-নেতাদের ছোঁয়াচ এড়াতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যেমন, মদন মিত্র। রাজ্যের বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী মমতার ঘনিষ্ঠ-ব্রিগেডের এক জন বলেই রাজ্যবাসীর কাছে পরিচিত। কিন্তু এখন আর তা বলতে নারাজ নবান্নের শীর্ষমহল। সারদা-কেলেঙ্কারিতে পরিবহণ মন্ত্রীর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক বাপি করিম এবং ছায়াসঙ্গী প্রশান্ত প্রামাণিককে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই জেরা করার পর থেকেই মমতার কাছে এক রকম ‘ব্রাত্য’ হয়ে গিয়েছেন মদন। এতটাই যে, সিবিআই তাঁকে ডাকলে রাজ্যের নতুন পরিবহণ মন্ত্রী কে হবেন, সেই ভাবনাও শুরু হয়ে গিয়েছে নবান্নের চোদ্দো তলায়।

Advertisement

কিন্তু সে তো পরের কথা। আপাতত ছোঁয়াচ এড়াতে দূরত্ব বজায় রাখার ‘হুকুম’ দেওয়া হয়েছে খোদ মদনবাবুকেই! কী রকম? নবান্ন ও পরিবহন দফতর সূত্রের খবর, মদনবাবুর বেশি প্রকাশ্যে আসা চলবে না। দফতরে গেলেও সেখানে বেশি সময় কাটানোর প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষত সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে হবে। কোথাও বেশি কথা না বলাই ভাল। তাঁকে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

যে হেতু সারদা-কাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে সিবিআই, তাই মদন মিত্রের পরিবহণ দফতরের সরকারি অনুষ্ঠানও প্রকাশ্যে এড়িয়ে চলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন সূত্রের খবর, দক্ষিণেশ্বরে নতুন একটি জেটি তৈরি করেছে পরিবহণ দফতর। কথা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী যে দিন বেলুড় (১০ সেপ্টেম্বর) যাবেন, সে দিন ওই জেটির উদ্বোধন করবেন। নির্দিষ্ট দিনে মমতা বেলুড় গিয়েছেন। কিন্তু নবনির্মিত জেটির ত্রিসীমানাতেও যাননি! কেন? পরিবহণ দফতরের খবর, জেটি উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী গেলে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী হিসেবে মদনবাবুকে সেখানে থাকতে হতো। মুখ্যমন্ত্রী তা চাননি। তাই জেটির উদ্বোধনও করেননি।

প্রশাসনের অন্য একটি অংশ অবশ্য যুক্তি দিয়েছে, রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন থাকায় নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। তাই বিতর্ক এড়াতেই জেটির উদ্বোধন এড়িয়ে গিয়েছেন মমতা। যদিও প্রশাসনের অন্য এক অংশের বক্তব্য, দক্ষিনেশ্বর এলাকাটি কোনও উপনির্বাচন কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে না। তাই সেখানে জেটি উদ্বোধন করলে বিধিনিষেধ ভঙ্গ হতো না। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, এ মাসে তাদের আরও কয়েকটি জেটির উদ্বোধন হওয়ার কথা। শহরের কোনও এক প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চ থেকে বোতাম টিপে মুখ্যমন্ত্রী সেগুলির উদ্বোধন করবেন বলে আপাতত ঠিক হয়েছে।

মদনকে এড়িয়ে চলা অবশ্য কিছু দিন আগেই শুরু করেছেন মমতা। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রাজারহাটের ইকোপার্ক থেকে এসি বাসের সূচনা অনুষ্ঠান ছিল পরিবহণ দফতরের। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণ মন্ত্রী দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মদনবাবু মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলেও মমতা যে তাঁকে এড়িয়ে চলতে চাইছেন, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট ছিল। কার্যত তার পর থেকে দু’জনের আর দেখাই হয়নি।

শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও মদনবাবু হাজির হননি। তবে বিকালের পর নিজের দফতরে গিয়েছিলেন। কেন গেলেন না? জবাবে ‘ব্যক্তিগত কাজ’-এর কথা বলেছেন মন্ত্রী। যার জেরে নিজেকে সব কিছু থেকে অনেকটাই সরিয়ে রেখেছেন মদন। অনেকটা বেশি সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। অন্য দিকে নবান্নের খবর, সিবিআই ডাকলে পরিবহণ মন্ত্রীকে ঝেড়ে ফেলতে যাতে সময় না লাগে, তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।

মদনের মতো আরও এক জন, বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কেও এক রকম ‘সেন্সর’ করা হয়েছে। তাঁকে ইতিমধ্যে জেরা করেছে ইডি। সেই কারণে গত বারের মতো এ দিনও তাঁকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেখা যায়নি। তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় কোথাও বেরোচ্ছেন না মন্ত্রী। যদিও এ দিন বাড়িতে তাঁকে বিশেষ দেখা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement