রাজ্যে সেনা মোতায়েনকে ঘিরে কিছু দিন আগেই কেন্দ্র-নবান্ন সংঘাতের পরিস্থিতি হয়েছিল। এ বার নয়া বিতর্ক তৈরি হল বাংলায় আয়কর অফিসারদের নিরাপত্তায় আধাসেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি লঙ্ঘন করে দিল্লি এই পদক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করে শুক্রবার ফের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি রাজ্যে নিযুক্ত আয়কর অফিসারদের নিরাপত্তার জন্য আধাসামরিক বাহিনীর ১৫ জন জওয়ানকে মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মুখ্যমন্ত্রীর মোদ্দা বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি কেন্দ্র। ঠিক যে ভাবে রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে কিছুদিন আগে বাংলার ১৮টি জায়গায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল, এ বারও তেমনই করা হয়েছে। রাজনাথকে পাঠানো চিঠিতে মমতা লিখেছেন,‘‘রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে। কারণ, এটা একেবারেই বেআইনি তথা সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি-বিরোধী।’’ তাঁর কথায়,‘‘একমাত্র রাজ্যের সুপারিশের ভিত্তিতেই আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা যায়।’’
শুধু রাজনাথকে ওই চিঠি পাঠিয়ে থেমে থাকেননি মমতা। সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও ওই চিঠির প্রতিলিপি পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া রাজনৈতিক ভাবেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন,‘‘তৃণমূল নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় যেত তেন প্রকারে নবান্নকে অস্থির করতে চাইছে মোদী সরকার।’’
যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এই অভিযোগ খন্ডন করা হয়েছে। মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, আরও কয়েকটি রাজ্যে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই আপত্তি তুলেছে। এই পদক্ষেপের প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন আয়কর দফতরের কর্তারাও। আয়কর দফতরের ডিজি(তদন্ত) অভয় শঙ্করের বক্তব্য,‘‘যে ভাবে গত এক মাস ধরে কাজ চলছে, তাতে কোনও একটি বাহিনীর পক্ষে আয়কর কর্তাদের নিরাপত্তা সামলানো সম্ভব নয়। তাই অতিরিক্ত বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছি। কারণ, যে কোনও সময়ে যে কোনও পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’’
সরাসরি রাজ্য পুলিশের উপরে অনাস্থা প্রকাশ না করলেও আয়কর দফতরের একাধিক কর্তা জানান, ৮ নভেম্বরের পরে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মিলিয়ে ৪২টি বিভিন্ন জায়গায় হানা দিতে হয়েছে তাঁদের। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কখনও রাজ্য, কখনও বা কলকাতা পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ সাধ্যমতো অফিসার ও কর্মী পাঠালেও অনেক সময়েই তাদের পাঠানো বাহিনী পর্যাপ্ত ছিল না। সে জন্যই আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান মোতায়েনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ দিন এক ব্যবসায়ীকে আটক করার সময়ে আয়কর অফিসারদের সঙ্গে সিআরপি-র জওয়ানেরাই ছিলেন।
যদিও কলকাতা পুলিশের পাল্টা দাবি, আয়কর অফিসারদের সাহায্য করতে তাঁরা কোনও ত্রুটি রাখেননি। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার-৩ সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘দিন তিনেক আগে আয়কর দফতরের তরফে তল্লাশির জন্য বাহিনী চাওয়া হয়েছিল। প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী তা দেওয়াও হয়েছে।’’ বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কথায়,‘‘আয়করের মতো স্বশাসিত দফতর যখন খুশি নিজের মতো করে কাজ করতে পারে। কালো টাকা উদ্ধারের সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়টাই বেশি প্রয়োজন।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর তির্যক কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট যে উনি বা ওঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন! নইলে এ ক্ষেত্রে আধাসেনা মোতায়েন নিয়ে জটিলতা তৈরির কারণ দেখছি না।’’