বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরুণাভ ঘোষ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আচমকাই দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদী সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে 'প্রতিহিংসার রাজনীতি' বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধীরা। আইনগত ভাবে এই প্রক্রিয়ায় কোনও ত্রুটি না থাকলেও, ঘটনার সময়োপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বিশিষ্ট আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের মতে, মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি করেন। কেন্দ্রই এই সমস্ত আধিকারিকদের রাজ্যে কাজ করার জন্য অনুমতি দেন। তবে এ ক্ষেত্রে যে রাজ্যে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক কাজ করছেন, তাঁদের সুবিধা অসুবিধাও দেখতে হয়। কোভিডের সঙ্কটজনক পরিবেশ, সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সেই পরিবেশ পরিস্থিতি সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যা করছে, তাকে প্রতিহিংসার রাজনীতিই বলা চলে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে হেরে গিয়ে কেন্দ্রের শাসকদল এমন আচরণ করছে। এতে বিজেপি-রই ক্ষতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরেরও সচিব রয়েছেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমান্য করতে পারেন না। তেমনই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যসচিব ছিলেন। তিনি তো মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চাকরি করেন। তাঁর নির্দেশ মুখ্যসচিবকে মেনে চলতেই হবে।’’
একই সুরে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধেছেন সিপিএমের আইনজীবী সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘‘অবশ্যই মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠানোর প্রবিধান রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা মুখ্যসচিবের অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রই তাঁকে ৩ মাসের এক্সটেনশন দিয়েছে। সেই এক্সটেনশন পিরিয়ডে তাঁকে আচমকাই তুলে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দিল্লিতে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোথায় দেবে? এ সব অবিবেচনার কাজ হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকার চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, ১৯৮৭ ব্যাচের আইএএস অফিসার আলাপনকে ভারত সরকারের কাজে যোগদানের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার যোগদান কমিটি। অবিলম্বে তাঁকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৩১ মে সকাল ১০টায় নয়াদিল্লির নর্থ ব্লকে কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতরে আলাপনকে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীই চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যসচিবের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি করেছিলেন। ৩ মাস তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু তার কয়েক দিন পরই আলাপনের বদলির চিঠি এসেছে নবান্নে।
কলাইকুণ্ডায় মুখ্যসচিব বা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে যাননি বলে অভিযোগ করে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই মুখ্যসচিব বা স্বরাষ্ট্রসচিব, কেউই ছিলেন না বলেও অভিযোগ করেছে বিজেপি। তার কয়েক ঘণ্টা পরে আলাপনের বদলির নির্দেশের পিছনে স্বাভাবিক ভাবে রাজনৈতিক যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ রাজনৈতিক মহলের। আর এই পরিস্থিতিতে মমতা পাশে পেয়ে গিয়েছেন তাঁর বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ও সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন তৃণমূল সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রর সমালোচক হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু মুখ্যসচিবকে আচমকা দিল্লিতে ডেকে পাঠানোর ঘটনায় তাঁদের মতো বিরোধীরাও মমতাকেই সমর্থন করে মোদী সরকারের সমালোচনায় নেমেছেন।