ফের কলম ধরলেন মমতা।—ফাইল চিত্র।
তিনি যে বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বুধবারই। শুধুমাত্র প্রভাবশালী হওয়ার দৌলতে করোনার মতো অতিমারির পরিস্থিতিতে নিয়ম-কানুনকে কেউ বুড়ো আঙুল দেখাবেন, তা তিনি বরদাস্ত করবেন না— বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকলেন না। বৃহস্পতিবার কলম ধরলেন মমতা। করোনা মোকাবিলায় সাধরণ জনতা যে রকম ‘দায়িত্বশীল’ আচরণ করছেন, এ দিন কবিতা লিখে তার প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সমাজে যাঁরা ‘দামী’ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের অনেকের আচরণে যে তিনি সন্তুষ্ট নন, সে ইঙ্গিতও এ দিনের কবিতায় স্পষ্ট ভাবে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়েই কলম ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অযোধ্যা ইস্যু হোক বা সিএএ, কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের কোনও টানাপড়েন হোক বা কোনও সামাজিক বিষয়— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বারই নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন কবিতার মাধ্যমে। সে সব কবিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছেন তিনি প্রায় প্রতি বারই।
এ বার করোনা সঙ্কট নিয়েও কবিতা লিখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অতিমারির সংক্রমণ এড়ানোর জন্য যখন সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা প্রয়োজন, তখন একটি নির্দিষ্ট অংশের কেউ কেউ বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন— কবিতায় এই রকম ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘গরীব মানুষগুলো / সমাজে খুব সচেতন। / কিন্তু যাদের সচেতনতা / এ সমাজকে আক্রান্ত করার / হাত থেকে বাঁচাতে পারত, / তারা কি সচেতন?’’ কবিতায় প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।
আরও পড়ুন: পার্কে? যায়নি ।। সিনেমা? যায়নি ।। শপিং মল? যায়নি
মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা কি নির্দিষ্ট কারও উদ্দেশে? রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আমলার ইতিমধ্যেই তুমুল বিতর্কে জড়িয়েছেন করোনা সতর্কতা না মেনে চলার অভিযোগে। তাঁর ছেলে বিদেশ থেকে ফিরেছেন কয়েক দিন আগে। এয়ারপোর্ট থেকেই ওই তরুণকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি যাননি। দিন দুয়েক পরিবার ও পরিচিতদের সঙ্গে কাটিয়ে তিনি হাসপাতালে যান এবং সেখানে ধরা পড়ে যে ওই তরুণ করোনায় আক্রান্ত। এয়ারপোর্ট থেকেই হাসপাতালে চলে যাওয়ার পরামর্শ এড়িয়ে গিয়ে ওই তরুণ কত জনকে সংক্রামিত করেছেন, তা নিয়েই তুমুল বিতর্ক শুরু হয় গোটা রাজ্যে। ছেলের সংস্পর্শে আসার পরে আমলা মা নবান্নে গিয়ে কী ভাবে কাজ করলেন, এক জন উচ্চপদস্থ আমলার মধ্যে সচেতনতার এই রকম অভাব কী ভাবে ঘটল, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে গিয়েছে সব মহলে। বাবা-মা প্রভাবশালী বা ভিআইপি বলে সন্তান নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন, এটাকে তিনি সমর্থন করতে পারছেন না এবং বরদাস্তও করবেন না— জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে বাজার বন্ধের গুজব, অযথা মজুত করছেন অনেকে
ইংল্যান্ড ফেরত তরুণ এবং তাঁর আমলা মা ও চিকিৎসক বাবার মধ্যে সচেতনতার অভাবকে ঘিরে যখন তুমুল সমালোচনা, তখন কিছুটা বেপরোয়া ভাব দেখা গিয়েছে অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যেও। বিদেশ থেকে সদ্য ফিরেছেন তিনিও। কিন্তু ফিরে তিনি সকলের সঙ্গেই অবাধে মেলামেশা করছেন, একটি মঠে ভাষণ দিতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন। অভিষেকের এই ভঙ্গির সমালোচনায় সরব অনেকে। সমাজের প্রথম সারিতে থাকা লোকজন এই রকম ‘অসংবেদনশীল’ আচরণ কী ভাবে করছেন, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা শিবির থেকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতাতেও কি সে সবেরই ইঙ্গিত? করোনার মতো ভয়াবহ সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সমাজের সব অংশকেই যে সমান ভাবে দায়িত্বশীল হতে হবে, সে বার্তা যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দিতে চেয়েছেন কবিতায়, সে বিষয়ে অবশ্য কোনও সংশয় নেই।