Mamata Banerjee

মালবাজারে মৃতদের বাড়ি যেতে পারেন মমতা, উত্তরবঙ্গ সফরে দুর্গত পরিবারগুলির সঙ্গে হতে পারে কথা

১৭ অক্টোবর উত্তরবঙ্গে পৌঁছবেন মমতা। সে দিন বিশেষ বিমানে তিনি হাসিমারায় পৌঁছবেন। সেখান থেকে মালবাজারে। সে দিন ও ১৮ অক্টোবর দুর্গতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৫৪
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

দুর্গাপুজোর দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের সময় জলপাইগুড়ির মাল নদীতে আসা আচমকা বানে মৃত্যু হয়েছিল আট জনের। ওই দুর্ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠেছিল একরাশ প্রশ্ন। ক্ষোভ ছিল স্থানীয় স্তরেও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আসন্ন উত্তরবঙ্গ সফরের শুরুতেই জলপাইগুড়ির মালবাজারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত স্থির থাকা পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে গিয়ে দুর্গতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক স্তরেও বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, ১৭ অক্টোবর উত্তরবঙ্গে পৌঁছবেন মমতা। সে দিন বিশেষ বিমানে তিনি হাসিমারায় পৌঁছবেন। সেখান থেকে পৌঁছবেন মালবাজারে। সে দিন ও তার পরের দিন ১৮ অক্টোবর বান-দুর্ঘটনায় দুর্গতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর। সে দিনই তিনি মালবাজারে সভাও করতে পারেন। প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের পরে, সরকারি সভাও হতে পারে। প্রশাসনিক সভার জন্য ইতিমধ্যেই মাল আদর্শ বিদ্যাভবনের সভাঘর বাছাই করা হয়েছে। সরকারি সভা হলে, ওই স্কুলের মাঠে হবে বলে স্থির করা হয়েছে। স্কুলের সভাঘর এবং মাঠের পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক বিধায়কের মালবাজারে একটি রিসর্ট রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৭ অক্টোবর সেখানে মুখ্যমন্ত্রী রাত্রিবাস করতে পারেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এবং পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্তের নেতৃত্বে আধিকারিকদের একটি দল শুক্রবার ওই রিসর্ট পরিদর্শনে যান।

Advertisement

মালবাজারের ওই দুর্ঘটনার পরেই মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ এবং আহতদের ৫০ হাজার করে টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল রাজ্য। ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রও। প্রসঙ্গত, মহালয়ার আগেই হড়পা বান এসেছিল মাল নদীতে। তার তোড়ে ভেসে গিয়েছিল অস্থায়ী বাঁধ এবং নদীখাতে থাকা একটি ট্রাকও।

প্রশ্ন উঠেছিল, সেখানেই কেন ফের বাঁধ তৈরি করা হল? অত দর্শনার্থী এবং প্রতিমাবাহী লরিকে কেন নদীর মাঝের চরে যেতে অনুমতি দেওয়া হল? পাহাড়ে নিয়মিত বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকার পরেও কেন সে দিকটি নজরে রাখা হয়নি?

যদিও প্রশাসনিক ব্যাখ্যা ছিল, সেই দিন উত্তরবঙ্গে কোনও অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। সম্ভবত রাজ্যের বাইরে মাল নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় বৃষ্টি হয়েছিল। মেঘ ফাটার কারণে এই জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে এই জলোচ্ছ্বাসের কোনও আগাম খবর পাওয়া সম্ভব ছিল না। প্রশাসনের অভিযোগ, দুর্ভাগ্যবশত, কোনও বিশেষ অভিসন্ধি নিয়ে কিছু শ্রেণির মানুষ একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের যে ভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে তা নিন্দনীয়। অবশ্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ীই, ৭ অক্টোবর জেলায় জেলায় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল হয়েছিল। বাদ ছিল জলপাইগুড়ি। ৮ অক্টোবর তা হয় কলকাতার রেড রোডে। দুর্গাপুজোর বিসর্জনে অত বড় ঘটনার পরেওসেই কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছিল প্রশ্ন।

এই অবস্থায় মালবাজার দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর শুরু হওয়াকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। প্রশাসনের অনেকে জানাচ্ছেন, যেখানে যখনই মানুষ বিপদে পড়েছেন, তখনই সেখানে ছুটে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গতি আনার পদক্ষেপও করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ফলে এই সফর তাঁর আন্তরিকতারই পরিচয় বহন করে।

সূচি অনুযায়ী, ১৯ অক্টোবর শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মেলন করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে সরকারের পদস্থ কর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

জেলাস্তরের অফিসারেরা ছাড়াও সেখানে উত্তরবঙ্গের শিল্পমহলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেই খবর। প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান, মূল অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কারণে হয়ত প্রশাসনিক ভাবে কোনও বৈঠকও করতে পারেন মমতা। তবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। ২০ অক্টোবর শহরে ফেরার কথা তাঁর। মমতার এই সফর নিয়ে শুক্রবারেই রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী একটি প্রশাসনিক বৈঠকও করেন। মালবাজারে কোন কোন ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় সেখানে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement