মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
হনুমান জয়ন্তী পালনে শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের যে নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্ট দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ওই নির্দেশের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘হাই কোর্টের রায় আমাদের জন্য ভাল হয়েছে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আশা করি, সবাই এটা মেনে চলবে।’’ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষের স্বার্থেই হাই কোর্ট সক্রিয় পদক্ষেপ করেছে। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও রাজভবন— আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে তৈরি। কাল রাজ্যবাসী নতুন সূর্যোদয় দেখবে।’’ দুষ্কৃতীদের উদ্দেশেও কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এ দিকে, হাই কোর্টের এই নির্দেশকে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নদিয়ায় কিশোরীর গণধর্ষণ-মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে সেখানে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘উচ্চ আদালত আস্থা রাখতে পারেনি, এটা রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতা।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ যে শিবপুর, রিষড়ায় দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল, তা প্রমাণিত। পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত, অন্তত পুলিশ দফতরটা ছেড়ে দেওয়া উচিত!’’ সেই সঙ্গে, উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলে আজ হনুমান জয়ন্তীর দিনে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘নজরবন্দি’ করার দাবিও করেছেন তিনি। এই কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে জানানো হয়েছে, তারা আদালতের নির্দেশ মেনে চলবে।
রামনবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তির পরে হনুমান জয়ন্তী পালন শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে এ দিন স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘সবাই সব উৎসব শান্তিতে পালন করুন। সবার উৎসবে সবাই যেন মিলিত হতে পারি।’’ সেই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর তো সব রাজ্যের জন্যই অ্যাডভাইজ়রি (পরামর্শ-নির্দেশিকা) পাঠিয়েছে।’’ দিঘায় সরকারি কর্মসূচিতে এসে মঙ্গলবারও হনুমান জয়ন্তী উদযাপনে শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে নজরবন্দি করার যে দাবি শুভেন্দু করেছেন, সে সম্পর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে বেঁচে থাকতে এবং নিজেকে জেলের বাইরে রাখতে শুভেন্দুকে বিজেপির নেতাদের খুশি রাখতে হচ্ছে। তাই প্ররোচনামূলক কথা বলছেন।’’
হাই কোর্টের নির্দেশকে সামনে রেখে রাজ্য প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এক দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পরামর্শ-নির্দেশিকা পাঠাচ্ছে, অন্য দিকে হাই কোর্ট বলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিতে। যে হনুমান জয়ন্তীর কথা রাজ্যের মানুষ প্রায় জানতেনই না, এই জমানায় সেই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগছে! রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের অপদার্থতা আবার প্রমাণিত।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ চাইলে অশান্তি সামলাতে পারতো। কিন্তু সাগরদিঘির উপনির্বাচনের পরে বিজেপি এবং তৃণমূল পরিস্থিতিকে মেরুকরণ, বিভাজনের রাজনীতির দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। তাই পুলিশকে সক্রিয় হতে দেওয়া হয়নি। এখন হনুমান জয়ন্তীর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন হচ্ছে!’’ এই প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ভারতের ভারপ্রাপ্ত নেতা অমিয় সরকার হাই কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘আদালতের যে নির্দেশ রয়েছে, সেই নির্দেশ মেনে চলব। আমরা চাই না, কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিকউদ্দেশে আমাদের মিছিলে এসে রাজনৈতিক মন্তব্য করুন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যেখানে প্রশাসনের অনুমতি থাকবে না, সেখানে মিছিল করার দরকার নেই।’’
এরই মধ্যে পুলিশ সূত্রে খবর, হুগলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাঁশবেড়িয়ায় আসছে। বৃহস্পতিবার সকালে পথে নামার কথা। বাঁশবেড়িয়ায় হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে থাকার কথা লকেট ও সুকান্তেরও।