শৃঙ্খলাভঙ্গে ছাড় নয় নিজের দলকেও, বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কর্মনাশা আন্দোলনে নিজের দলের ইউনিয়নকেও রেয়াত করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় শুক্রবারের ‘কলম ধর্মঘট’ (পেন ডাউন)-এ যাঁরা শামিল হয়েছিলেন তাঁদের নাম-ধাম ও বেতন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ ভবন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে তৃণমূলের দু’টি ইউনিয়নই এখন বেশি প্রভাবশালী। এই পদক্ষেপ তাই কার্যত শাসক দলের বিরুদ্ধে যায়। তাই কর্মক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের এই ভূমিকাকে ‘নজিরবিহীন’ আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে।
সংস্থার খবর, এই আচমকা প্রতিবাদ কার্যত ‘অন্তর্ঘাত’ বলে চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হতে পারে। ঘটনাচক্রে প্রতিবাদে সামিল কর্মীদের অনেকেই তৃণমূল অনুমোদিত ইউনিয়নের সদস্য। ফলে অস্বস্তিতে সরকার। সরকারের দাবি, কর্মীরা যে কাজ না-করে দিনভর প্রতিবাদ জানাতে পারেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি বিদ্যুৎ দফতর। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ বণ্টন জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থা। সেখানে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। তাঁরা যে ইউনিয়নেরই হোন।’’
গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে বিদ্যুৎ চুরি, অনাদায়ী বিল, সংবহনের লোকসান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। বকেয়া মহার্ঘ ভাতার প্রসঙ্গও ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, লোকসান কমিয়ে আয় বাড়াতে না পারলে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়।
সে কথা জানাজানি হতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মীরা। শুক্রবার তাঁদের একাংশ ‘পেন ডাউন’ করেন। সংস্থা সূত্রের খবর, বিভিন্ন শাখা অফিসের প্রায় ২০০০ কর্মী প্রতিবাদে সামিল হয়ে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। বুধবার সংস্থার সদর দফতর বিদ্যুৎ ভবনেও চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ পাণ্ডের ঘরের সামনে যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকেই কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দু’টি ইউনিয়নও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল। একটির সভাপতি তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কর্মীদের প্রতি সংবেদনশীল। তাঁর সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি।’’ অন্য ইউনিয়নের মাথায় আছেন আর এক তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘দাবি ন্যায্য হলেও তা চাওয়ার পদ্ধতি ঠিক ছিল না।’’ যদিও সেই ইউনিয়নেরই নেতা অরিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘ডিএ না পেয়েই আন্দোলন। কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তার বিরোধিতা করছি।’’
বিদ্যুৎ ভবনে সিটু সমর্থিত ইউনিয়নের নেতা দীপক রায়চৌধুরীও জানান, ডিএ না-পেয়ে আন্দোলনকারী কর্মীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের এই আচরণ মানা যায় না।