কলকাতা পুলিশের অনুষ্ঠানে মমতা
আইএএস এবং ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার বার্তা আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার আইপিএস এবং ডব্লিউবিপিএস আধিকারিকদের মধ্যেও বৈষম্য ঘোচানোর কথা বললেন তিনি। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের বার্ষিক সভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘আইএএস এবং আইপিএস-রা একটা নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মধ্যে থাকেন। নির্ধারিত সময় তাঁরা সব কিছু পেয়ে যান। কিন্তু সমস্যায় পড়েন ডব্লিউবিপিএসের আধিকারিকরা। ওঁদের জন্য কিছু একটা করা দরকার।’’
রাজ্য পুলিশকে আরও শক্তিশালী করার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, সর্বভারতীয় পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) এবং রাজ্য পুলিশ সার্ভিস (ডব্লিউবিপিএস) থেকে উঠে আসা আমলাদের মধ্যে সমতা আনা হবে মর্যাদা আর অর্থ, দুই ক্ষেত্রেই। শুধু তাই নয়, পদোন্নতি-সহ তাঁদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কথাও বললেন তিনি।
সভায় মমতা বললেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন ওসি, এসআই, কনস্টেবলরা। নিচুতলার পুলিশকর্মীরা রাজ্যের সম্পদ। নিচুতলার পুলিশকর্মীরা সাহায্য না করলে এই সাফল্য আসে না। ডব্লিউবিসিএসের সমাধান করতে পারলে করলে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিসেরও সমাধান প্রয়োজন। এখানে (অনুষ্ঠানে) আসার আগে অর্থ দফতর, মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবের কাছে একটা কাগজও পাঠিয়ে এসেছি। স্টেট পুলিশ সার্ভিসে অনেক বৈষম্য রয়েছে। কোনও আইপিএস অফিসার যদি ২ হাজার টাকা ভাতা পান, তা হলে রাজ্যের পুলিশ সার্ভিসের অফিসার পান ২০০ টাকা।’’
মুখ্যমন্ত্রী আইএএস এবং বিসিএস আমলাদের সমমর্যাদার করে তোলার বার্তা দিতেই সমালোচনার সুর তুলেছিল বিরোধী শিবির। এ বারও বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, প্রশাসন বেশি আমলা-নির্ভর হয়ে উঠলে আমলাতন্ত্রেরই ভারসাম্য নষ্ট হবে।
ইতিমধ্যেই সর্বভারতীয় পেশায় কর্মরত আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের ক্যাডার আইন সংশোধন করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের উপরে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ তুলনায় কমবে। বদলি বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের উপরে ওই অফিসারদের নির্ভরতা অনেকটাই বাড়তে পারে। অন্য দিকে, রাজ্যের নিজস্ব ক্যাডারের (ডব্লিউবিসিএস এবং ডব্লিউবিপিএস) অফিসারেরা রাজ্য সরকারের উপরেই নির্ভরশীল। প্রশাসনিক মহলের প্রশ্ন, এই ভাবেই কি ভরসার প্রশ্নে কেন্দ্রের আমলাদের সঙ্গে টেক্কা দেবেন রাজ্যের আমলারা? মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, ‘‘বাংলায় আইপিএস তৈরি হোক আমরাও চাই। কিন্তু এখন তো সেই ভাবে দেখাই যায় না। সেই কবে জাভেদ হয়েছিল!’’
সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে রাজ্য পুলিশকে। বিশেষত, হাওড়ার ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং বগটুই গ্রামে কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের জেরে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর পুলিশমন্ত্রী মমতাকেই নিশানা করেছিলেন বিরোধীরা। সেই আবহে রাজ্য পুলিশের একাংশকে প্রকাশ্যে বিঁধতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের তুলনা টানলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশকে আগে স্কটল্যান্ডের পুলিশ (স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড) বলা হত। ওরা ছোট্ট জায়গায় কাজ করে। তাই ওরা অনেক শক্তিশালী।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘রাজ্য পুলিশকে আরও স্মার্ট হতে হবে। কলকাতা পুলিশের যা স্ট্রেন্থ রয়েছে, রাজ্য পুলিশের তা নেই। সেই কাজটা করতে হবে। অনেক নতুন থানা তৈরি করা হয়েছে। নতুন কমিশনারেট তৈরি করেছি। পুলিশের শূন্য পদে নিয়োগ করতে হবে।’’