এ দিন দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘নেত্রীর এই কথার মধ্যে অর্থ খুঁজতে চাইলে, পি কে-র আগামী দিনের ভূমিকা সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন আভাস মিলতে পারে। যদিও সবটাই নির্ভর করবে নেত্রীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপরে। তৃণমূলে তিনিই শেষ কথা।’’
ফাইল চিত্র।
দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব বণ্টন করতে গিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, ‘নতুনদের দরকার আছে। তবে ওল্ড ইজ গোল্ড।’ দায়িত্ব বণ্টনের নিরিখে তৃণমূল কংগ্রেসের পুরনো ও প্রবীণ নেতাদের ‘মান্যতা’ দিয়ে মমতা তাঁর সেই ভাবনাকেই সাংগঠনিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।
শুক্রবারের সাংগঠনিক বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় কমিটির পদ বণ্টনের পরে চর্চায় সামনে এসেছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। কারণ, তরুণ প্রজন্মের এই নেতাকে একমাত্র সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মমতা একাধিক সাধারণ সম্পাদক করতে চেয়েছিলেন। সেটা না হলেও জাতীয় দলে সমন্বয়কারী হিসাবে ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে দায়িত্ব দেওয়া অর্থবহ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, তিনি জাতীয় ও রাজ্য দলের মধ্যে সমন্বয়কারীর কাজ করবেন। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, ববি রিপোর্ট করবেন সরাসরি মমতাকে। মাঝে অন্য কোনও স্তর থাকবে না। শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। তাঁকে নিয়ে সহ-সভাপতির সংখ্যা দাঁড়াল চার।
দলের টাকা-পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে ‘চেক’ সইয়ের অধিকার থাকছে তিন জনের হাতে। তাঁরা হলেন, দুই সহ-সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ অরূপ বিশ্বাস। এঁরাও সকলে পুরনো এবং মমতার সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। এই ব্যবস্থাকে এক দিকে যেমন খরচে রাশ টানার উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে, তেমনই সেই দায়িত্ব পুরনোদের হাতে দেওয়াও তাৎপর্যপূর্ণ।
সূত্রের খবর, খরচ কমাতে দলের ভাড়া নেওয়া একটি বিমান এ বার ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এখন সরকার একটি বিমান ভাড়ায় নিয়েছে। জানা গিয়েছে, সরকারি কাজে যখন ব্যবহৃত হবে না, তখন সংস্থার কাছ থেকে বিমানটি ভাড়া নেওয়া যায়। যেমন, মমতার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রয়োজনে দল নিয়ে থাকে।
কিন্তু আলাদা আরও একটি বিমান রেখে খরচ বাড়ানো চলবে না। একই ভাবে দলের কোথায়, ক’টি অফিস আছে, সেই সব অফিসে কে বা কারা বসেন এবং দলকে তার আর্থিক ভার বইতে হয় কি না, সেগুলিও নজরদারির আওতায় আনতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী।
শুক্রবারের বৈঠকে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পি কে) ব্যাপারে কোনও আলোচনা না হলেও, তৃণমূলের উপরতলায় পি কে-র ভবিষ্যৎ নিয়ে গুঞ্জন ও জল্পনা যথেষ্ট। দলকে মমতা আগেই জানিয়েছেন, তিনি পি কে-র সঙ্গে কথা বলবেন। পরামর্শদাতা আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের চুক্তির বিষয়গুলিও তিনি খতিয়ে দেখবেন। দলে অনেকের ধারণা, এই রাজ্যে পি কে-র ভূমিকাকে কার্যত খর্ব করে দেওয়ার পক্ষপাতী তৃণমূল নেত্রী। সে ক্ষেত্রে পি কে বাংলার বাইরে অন্যান্য রাজ্যে তৃণমূলের পরামর্শদাতা বা ভোটকুশলী হয়ে কাজ করবেন কি না, আইপ্যাকের ভূমিকাই বা কী হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তৃণমূলে পি কে এসেছিলেন অভিষেকের ব্যবস্থাপনায়। প্রসঙ্গত, শুক্রবারের বৈঠকে মমতা বলেছেন, ‘অভিষেক বাইরের রাজ্যগুলি যেমন দেখছে, দেখবে।’
এ দিন দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘নেত্রীর এই কথার মধ্যে অর্থ খুঁজতে চাইলে, পি কে-র আগামী দিনের ভূমিকা সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন আভাস মিলতে পারে। যদিও সবটাই
নির্ভর করবে নেত্রীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপরে। তৃণমূলে তিনিই শেষ কথা।’’