কাঞ্চন মল্লিক এবং শ্রীময়ী চট্টরাজের লক্ষ্মীপুজো
যৌথ পরিবারে আমার বড় হওয়া। ছোট থেকে ঠাকুমাকেই দেখেছি নিজে হাতে সবটা সামলাতে। পুজোর মুড়কি থেকে নাড়ু বানানো, সবটাই তৈরি হত ঠাকুমার হাতে। আমাদের লক্ষ্মীপুজোটা হয় আসলে দেশের বাড়িতে। আমার বাবার বাড়িতে ৩০০ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো হয়। সেখানেই মা লক্ষ্মীকে আনা হয়। তবে লক্ষ্মীপুজোর সময়টা কখনও থাকা হয়নি তেমন ভাবে। তবে আমাদেরও প্রতিষ্ঠিত মূর্তি রয়েছেন। ঠাকুমা চলে আসতেন এখানে দশমীর পরের দিন। তারপর ঠাকুমাই পুরো দায়িত্ব তুলে নিতেন নিজের কাঁধে। তবে আমাদের মাকে কোনও রকম অন্নভোগ দেওয়া হত না। সব মিলিয়েই আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীপুজো একেবারেই আড়ম্বরহীন। যেহেতু আমাদের ঘট আছে, তাই ছিমছাম ভাবেই মায়ের আরাধনা হয়।
তবে ঠাকুমাও এখন আর নেই। আর মায়েরও বয়স বাড়ছে। এখন আর একা হাতে সবটা করে উঠতে পারেন না। দোকান থেকেই পুজোর সমস্ত সরঞ্জাম কিনে, প্রসাদের ব্যবস্থা করে পুজো সারেন। বিয়ের পর এটা আমার প্রথম লক্ষ্মীপুজো। কাঞ্চনের মা প্রতিষ্ঠিত মূর্তি রেখে গিয়েছেন, তাঁকেই পুজো করা হয়।
পুজোর বাজার হয়ে গিয়েছে আমাদের। তবে কাঞ্চন যেতে পারেনি। ওর শরীর ভাল নেই। পুজোর পাঁচটা দিন খাওয়াদাওয়া, ঘোরাফেরা অনিয়ম, সব মিলিয়েই শরীরটা খারাপ হয়েছে। গত কালও সকাল বেলা খুব জ্বর। পুজোর কার্নিভালেও যাওয়ার কথা ছিল। সেখানেও গরহাজির। আমি পুজোর জন্য যতটা পেরেছি, করেছি।
খাওয়াদাওয়ার দায়িত্বটা বরাবরই আমি সামলাই। কাঞ্চন একদম রান্না পারে না। কোনও মশলাই চিনতে পারে না। এর জন্য কথা কাটাকাটিও হয়ে যায় মাঝে মধ্যে। তবে রান্না চেখে দেখার সময় তিনি বিরাট বড় বিচারক! কতটা নুন হল, কতটা ঝাল হল, এইগুলো ঠিকই বলতে পারে। তবে কি জানেন তো, মায়ের ভোগ তো, যেমন ভাবেই করি, মায়ের আশীর্বাদে তা ভালই হয়। মায়ের ভোগে খিচুড়ি, লাবড়া, পায়েস ইত্যাদি তো থাকেই। আর এ ছাড়া ভোগের ফল তো রয়েছেই।
তবে লক্ষ্মীপুজোতেও কাজ থেকে ছুটি পাইনি। বুধবার শুটিং রয়েছে। আমাদের তো এ দিন ঠাকুরমশাই আসবেন দেরি করে। সকালে পুজোর সময়টা থাকলে খুব সুবিধা হত। এ বার যদি একদম সকালে কল টাইম থাকে, তাহলে মনে হয় না খুব একটা ভোগ রেঁধে উঠতে পারব! তখন ফল-মিষ্টি-প্রসাদই ভরসা।
বৃহস্পতিবার মায়ের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব, তা সে যত কাজই থাকুক না কেন। আর শুটিং না থাকলে তো ভোগ নিবেদন করবই। মায়ের থেকে এটাই চাইব, সারা বছর ফলে-ফুলে সমৃদ্ধ রাখুন আমাদের। শুধু আমাদের নয়, পৃথিবীর সকলের মনে যেন শান্তি বিরাজ করে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।