বিদায়বেলায়: মুর্শিদাবাদে রওনা দেওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার মালদহ বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীকে বিদায় জানাতে মালদহ বিমানবন্দরে ভিড় জমল জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা-নেত্রীদের। বুধবার দুপুরে তা দেখে একজোট হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরভোটের আগে সেই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। তবে জেলায় দলের এমন ঐক্যবদ্ধ ছবি কত দিন থাকবে তা নিয়েও তাঁরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, অতীতেও অনেক বার দলনেত্রী সকলকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন। তার পরেও জেলায় গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ছবি বদলায়নি।
দলের অন্দরমহলের খবর, বছর দেড়েক আগে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মালদহ বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাতে আসা সাবিত্রী মিত্র, দুলাল সরকার, সোয়াজ্জেম হোসেনদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাবলা (দুলাল সরকার), মোয়াজ্জেম তোরা ভাল থাকিস। একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করিস।’’ কিন্তু অভিযোগ, তাঁর কপ্টার উড়ে যাওয়ার পরপরই ফের দ্বন্দ্ব ফেরে জেলা তৃণমূলে। যদিও দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে বুধবারও দাবি করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মৌসম নূর।
মঙ্গলবার মালদহে প্রশাসনিক বৈঠকে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে হেলিকপ্টারে মালদহে পৌঁছন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানাতে মালদহ বিমানবন্দরে ছিলেন মৌসম নূর, মোয়াজ্জেম হোসেন, কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, নীহাররঞ্জন ঘোষ, দুলাল সরকার। প্রশাসনিক বৈঠকের আগেই জেলার দলীয় নেতা-নেত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা। দলীয় সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে সকলকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেন দলনেত্রী।
এ দিন মালদহ সফরের পরে মুর্শিদাবাদে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ বিমানবন্দর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার দুপুর ১টা নাগাদ উড়ানের কথা ছিল। তবে দুপুর ১২টা ১৬ মিনিট নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছে যান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সময়ের আগেই মুর্শিদাবাদে পৌঁছতে হবে। সে জন্য তাড়াতাড়ি বের হয়েছি।’’ তবে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার পৌঁছতে দেরি হওয়ায় হেলিকপ্টারে অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ মালদহ বিমানবন্দর থেকে উড়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার।
মুখ্যমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন তৃণমূলের একঝাঁক নেতা-নেত্রী। দুপুর ১২টা নাগাদ বিমান বন্দরে পৌঁছন মৌসম নূর, সাবিনা ইয়াসমিন, মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবিত্রী মিত্র, নীহাররঞ্জন ঘোষ, নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন বিমানবন্দরের অফিসের সামনে। তাঁদের দেখে সেখানেই নেমে যান মমতা। তার পরে প্রায় ৩০ মিটার পথ হেঁটে পৌঁছন হেলিপ্যাডে। প্রশাসনিক বৈঠকে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির ঘনঘন রাস্তা অবরোধ, আন্দোলন নিয়ে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে ভর্ৎসনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন হেলিপ্যাড পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে ছিলেন এসপি-ও।
জেলা সফরে এসে দলনেত্রী নেতা-নেত্রীদের একসঙ্গে চলার নির্দেশ দেওয়ায় উচ্ছ্বসিত তৃণমূল কর্মী- সমর্থকেরা। তবে নেত্রীর নির্দেশ কতটা কার্যকর হবে না নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন দলের অনেকেই। তাঁদের দাবি, অতীতে অনেক বার নেত্রী সকলকে একসঙ্গে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি বদলায়নি জেলায়। তবে মৌসম বলেন, ‘‘দ্বন্দ্বের কোনও বিষয়ই নেই। আমরা সকলে একসঙ্গেই কাজ করব।’’