দলকে ‘কালিমামুক্ত’ করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র
গত আট বছর সরকারে থেকে দলে যে ‘প্রশাসনিক মেদ’ জমেছে, এ বার তা ঝরিয়ে ফেলা জরুরি বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলকে তাঁর নির্দেশ, ‘‘১৯৯৮ সালে দল তৈরির সময় আমাদের সঙ্গে না ছিল পুলিশ, না ছিল প্রশাসন। তখন যে ভাবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে আমরা এগিয়েছিলাম, এখনও ঠিক সে ভাবেই পুলিশের উপর ভরসা না করে আমাদের নিজেদেরই নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’’
বিরোধী ভাবমূর্তি মমতাকে সবসময় এগিয়ে দিয়েছে। আবার ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর দলে দুর্নীতি-দাদাগিরি-সহ নানা অভিযোগ ক্রমাগত উঠছে। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা কেলেঙ্কারির মতো বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগে সিবিআই তদন্ত চলছে দলের উপরতলার অনেক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। লোকসভা ভোটে তৃণমূল ধাক্কা খাওয়ার পরে দলের নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে দলীয় প্রতিনিধিদের জীবনযাপনের মান বদলে যাওয়া, জনসংযোগ-বিচ্ছিন্ন হওয়া, ঔদ্ধত্য ইত্যাদি লক্ষণ সামনে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী নিজে তোলাবাজির টাকা ফেরতের কথা বলায় আগুনে ঘি পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ সবই যে ‘ক্ষমতা’ ভোগের পরিণাম, সেই অভিযোগও উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে।
তাই তাঁর বিরোধী নেত্রীর ভাবমূর্তি আবার ফিরিয়ে এনে দলকে ‘কালিমামুক্ত’ করে মমতা আগামী বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে নামতে চান বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা। তাঁর এ দিনের নির্দেশ তারই প্রতিফলন বলে ওই পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
এ ক্ষেত্রে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মমতার সঙ্গে ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের একাধিক বৈঠক। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে পশ্চিম মেদিনীপুরের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যে বৈঠকে মমতা পুরনো ভাবমূর্তিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন, সেখানেও ওই ভোট-কুশলী প্রশান্ত উপস্থিত ছিলেন। দলের বৈঠকে প্রশান্তর উপস্থিতি নজর কেড়েছে। নবান্নে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দু’বারের বৈঠকের মতো এ দিন তৃণমূল ভবনেও তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যান সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের পরে মমতার গাড়িতে ফেরেন অভিষেক ও প্রশান্ত। অনেকের ধারণা, মমতার এ দিনের নির্দেশের পিছনে প্রশান্তের পরামর্শ থাকতে পারে।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের ‘অলিখিত জেলা সভানেত্রী’ বলা হত সেখানকার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ ভারতীও এখন বিজেপিতে। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বৈঠকে স্বীকার করেন, ওই দু’জনের উপর দীর্ঘদিন ‘ভরসা’ করা ‘ভুল’ হয়েছিল। শুভেন্দুই এখন পশ্চিম মেদিনীপুরের দলীয় পর্যবেক্ষক। শুভেন্দুদের এই স্বীকারোক্তির পরেই মমতা দলকে নির্দেশ দেন, পুলিশের উপর না ভরসা না করতে। বিজেপি-মোকাবিলায় মমতা দলের কর্মীদের ঔদ্ধত্য ছেড়ে মানুষের সঙ্গে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আয়নায় নিজেদের দেখুন। যে বুথে হেরেছেন, সেখানে মানুষের কাছে গিয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। নিজেদের পকেটে না ভরিয়ে পুরনোদের ফিরিয়ে এনে মানুষের পাশে থাকুন।’’