সতর্কবার্তা: কর্মিসভায় সোমবার দলের নেতাকর্মীদের সামনে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানতে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলকে চলতে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহার রাজবাড়ি স্টেডিয়ামে কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই বক্তব্য দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সভার মধ্যেই কাউকে ধমক দিলেন। জানিয়ে দিলেন, তিনি সব কিছু নজর রাখছেন। যে যেমন কাজ করবেন তাঁকে তিনি সে ভাবেই দেখবেন। সেই সঙ্গেই সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কারও বিষের ভাগ দল নেবে না। তিনি বলেন, “কোনও গ্রুপ তৃণমূলের নেই, থাকবেও না। একটাই গ্রুপ তৃণমূল কংগ্রেস, জোড়াফুল, তেরঙ্গা ঝাণ্ডা। তৃণমূলের নেতা বড় নয়, কর্মীরা বড়। তৃণমূল কর্মীদের উপর নির্ভর করেই চলবে। আমি বড় না ও ছোট কোনও ভাবার দরকার নেই। আমরা সবাই সমান, এটাই ভাবুন। তবেই আপনার কাজ সাফল্যমণ্ডিত হবে।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই কোচবিহারে রাজ্যের শাসক দলে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে। লোকসভাতেও প্রায় একই অবস্থা চলে। তার পরে লোকসভা ভোটে পরাজিত হয় তৃণমূল। তৃণমূল নেত্রীর কাছেও সেই খবর রয়েছে। তিনি মনে করিয়েও দেন, সবাই এক সঙ্গে চললে ফল এরকম হত না। সেই সঙ্গেই দলের কর্মীরাই সম্পদ বলে জানিয়ে দেন তিনি। কর্মীদেরই বেশি করে দায়িত্ব নিতে বলেন। তিনি বলেন, “এখানে বিনয়কৃষ্ণ নেতা নয়, রবি ঘোষ নেতা নয়, পার্থ-উদয়ন নেতা নয়, নেতা জোড়াফুল। মনে করবেন তৃণমূল না থাকলে বাংলার সর্বনাশ হয়ে যাবে। কে কাজ করছে আর কে দুষ্টুমি করছে আমি সব খবর রাখছি, যারা কাজ করছে তাঁদের নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।” পাশাপাশি অবশ্য জানিয়ে দেন, বিধায়কদের কাউকে অশ্রদ্ধা করা যাবে না। তাঁদের জয়ী করার দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে।
এ দিন বক্তব্য রাখার সময় কিছুটা আবেগ এনেই কোচবিহারের সঙ্গে যে তাঁর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক সে কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, ১৯৯২ সালে জনসংযোগ যাত্রা করেছেন তিনি। সেই সময় কোচবিহারে একটার পরে একটা রাস্তায় ঘুরেছেন তিনি। তখন যুব কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন মিহির গোস্বামী। তাঁর কথায়, “উত্তরবঙ্গে কেউ আসতেনই না। আমি এসেছি। এখনও আসি।”
বিজেপির গুন্ডামির কাছে দল হেরেছে বলে মনে করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি জানান, মা-বোনরা হাতা-খুন্তি নিয়ে কী করে গুন্ডামীর বিরুদ্ধে জবাব দিতে হয়, তা তাঁরা জানেন। দলের ছাত্রছাত্রীদের গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবাইকে আপন করে নিয়ে প্রচার চালাতে বলেন।
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহকে মঞ্চে তিরস্কার করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, “ভূষণ তোমাকেও বলি মিউনিসিপালিটির কাজ ভাল করে করতে হবে। লাইটের বিল নিয়ে তুমি আর রবি (রবীন্দ্রনাথ ঘোষ) ঝগড়া করবে না। দল ওসব দেখবে না। তুমি যখন মিউনিসিপালিটির চালাচ্ছ, এটা তোমার ডিউটি। তোমরা ভাষণ দেবে, আর পার্টি বিষ নেবে, এটা হবে না। দল কারও জন্য বিষ নেবে না।”
দিনকয়েক আগেই পুরসভার পথবাতির বিল নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন রবি ও বিনয়। মাঝে মাঝে কর্মসূচিও নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রবি অসুস্থ, বিনয়-পার্থ দায়িত্ব নিক। সব এমএলএদের সাথে নিক। জেলার কাজ ভাল করে করুক।”
তৃণমূল নেতাদের দাবি, এর পরে জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেকটাই কমবে। যদিও বিজেপির পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর এই কথাতেই প্রমাণ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে।