সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে গরমের ছুটি আরও ১৫ দিন বাড়তে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে রবিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলেন। তার ভিত্তিতেই শিক্ষা দফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে বলে জানা গিয়েছে। এত দিন ১৫ জুন পর্যন্ত ছুটি ছিল। আরও ১৫ দিন বাড়ানো হলে গোটা জুনই ছুটির আওতায় এসে যাবে।
বৈশাখের তাপপ্রবাহ স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি শুধু এগিয়েই আনেনি, তার দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। জ্যৈষ্ঠের দুঃসহ দহনে স্কুলে গরমের ছুটি আরও ১৫ দিন বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত মিলল রবিবার, ছুটির দিনেই।
অতিমারিতে বছর দুয়েক স্কুল বন্ধ থাকার পরে এ বার গরমের ছুটি এগিয়ে আনা এবং তার দৈর্ঘ্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠেছিল। দাবি উঠছিল ছুটি কমানোরও। এ বার ছুটি বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা শুনেই শিক্ষা শিবির থেকে বিভিন্ন মহলে ছুটি বৃদ্ধির যুক্তি নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠছে। দাবি উঠছে সকালে স্কুল করারও।
শিক্ষা সূত্রের খবর, রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে দণ্ড মহোৎসবে প্রচণ্ড গরমে প্রাণহানি এবং অনেকের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী স্কুলের বাচ্চাদের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। তাঁর মনে হয়েছে, এমন ভয়াবহ গরম চলতে থাকলে স্কুলপড়ুয়ারা খুবই অসুবিধায় পড়বে। তার পরেই তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন। বর্ষা উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গেলেও দক্ষিণবঙ্গ এখনও তার দাক্ষিণ্য পায়নি। দক্ষিণবঙ্গে অস্বস্তিকর গরম চলছেই। এর মধ্যে বর্ষা এসে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গেলে গরমের ছুটি কমিয়ে স্কুল খোলা যায় কি না, সেই বিষয়ে শিক্ষা দফতর পরিস্থিতি বিচার করে অন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও খবর।
রবিবার পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবে বহু মানুষের সমাগম ঘটেছিল। সেখানে মেলায় ভিড় ও অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। মৃত্যু হয় তিন জনের। বেশ কয়েক জন ‘হিট স্ট্রোক’-এর শিকার হন। এমন গা-জ্বালানো গরম চলতে থাকলে কচিকাঁচারা কী ভাবে স্কুলে পৌঁছবে, কী ভাবেই বা তারা পাঁচ ঘণ্টা স্কুল করবে,
সেটাই মুখ্যমন্ত্রীকে ভাবিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
শুধু পানিহাটির ঘটনা নয়, দিন পাঁচেক আগে আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় তাঁকে দেখার জন্য মা-বাবার সঙ্গে এসেছিল বছর এগারোর মুসকান। চাঁদিফাটা গরমে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী ওই কিশোরীকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে নিজেই তার পরিচর্যা করেন। নিজের হাতে তার মুখ মুছিয়ে জল খাইয়ে দেন।
পরে মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ারের গরমের মধ্যে ছাত্রীর অসুস্থ হওয়ার ঘটনাও মুখ্যমন্ত্রীকে চিন্তায় ফেলেছিল।
এপ্রিলের শেষে প্রচণ্ড গরম পড়ায় গরমের ছুটি ১৫ মে থেকে এগিয়ে এনে শুরু হয় ২ মে। ছুটি দেওয়া হয় টানা ৪৫ দিন। এত লম্বা ছুটির বিরোধিতা করেছিল বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন। তাদের বক্তব্য, করোনায় প্রায় দু’বছর স্কুলে কোনও ক্লাস হয়নি। অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে খুব কম পড়ুয়া। এই অবস্থায় ফের ৪৫ দিন গরমের ছুটি দিলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার নতুন করে আবার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
এই দফাতেও বেশির ভাগ শিক্ষক সংগঠন জানাচ্ছে, গরমের ছুটি ফের ১৫ দিন বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘করোনার সময় দীর্ঘ ছুটি, তার পরে ৪৫ দিন গরমের ছুটি। পড়াশোনার সঙ্গে বহু পড়ুয়া বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। তাদের দ্রুত স্কুলে আনতেই হবে।’’
নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের কথায়, ‘‘গরমের ছুটি বাড়লে পড়ুয়ারা ফের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ওদের প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন হয়নি এখনও। প্রয়োজনে মর্নিং স্কুল হোক।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।