Mamata Banerjee

সিপিএমকে সপ্তাহে এক বার পেটাই দেওয়া উচিত! ‘সুব্রতদার বলা সেই কথা মনে পড়ে গেল’ মমতার

শনিবার শালবনির সভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত এক সময় তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সপ্তাহে অন্তত এক বার সিপিএমকে ‘পেটাই দেওয়া উচিত’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ২০:৪১
Share:

মমতা জানালেন, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত এক সময় তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সপ্তাহে অন্তত এক বার সিপিএমকে ‘পেটাই দেওয়া উচিত’। ছবি: পিটিআই।

‘বদলা’ নয়, আজও ‘বদলেই’ বিশ্বাসী তিনি! এ কথা বলেও হঠাৎ ‘সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সিপিএম পেটানোর তত্ত্ব’ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার শালবনির সভায় দাঁড়িয়ে মমতা জানালেন, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত এক সময় তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সপ্তাহে অন্তত এক বার সিপিএমকে ‘পেটাই দেওয়া উচিত’। তাঁর কথায়, ‘‘সুব্রতদা বলতেন, তোর বড় দোষ। তুই এই সিপিএমটাকে ক্ষমা করলি। তুই জানিস যা অত্যাচার করেছে! সপ্তাহে এক বার যেমন রেশন পাওয়া যায়, তেমন সপ্তাহে এক বার পেটাই দেওয়া উচিত।’’ এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি সুব্রতদাকে বলতাম, ভেবেছেন ভাল কথা। (সুব্রতদার সেই কথা) আজও মনে পড়ে।’’ একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়ে দেন, তাঁর সরকার কাউকে মারবে না। অস্ত্রও হাতে নেবে না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কাউকে মারব না, পাপের মার বিচুটি দিয়ে ঘষলে চলে যাবে। বন্দুকের দরকার নেই। লাঠির দরকার নেই।’’

Advertisement

হঠাৎ কেন এমন একটা প্রসঙ্গ তুলে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী? নানাবিধ ব্যাখ্যা রয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

কারও মতে, বাংলার নির্বাচনী রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হতে হতেও আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছে সিপিএম। বিধানসভায় খাতা খুলতে না পারলেও, বেশ কিছু উপনির্বাচনে এবং পুরসভা ভোটে বিরোধী শক্তি হিসেবে তাদের ‘উত্থান’ নজরে পড়ার মতো। নানা জেলায় সমবায় ভোটেও বামেরা সাফল্য পেয়েছে। গত মাসেই নদিয়ার তেহট্টে সমবায় সমিতির ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে সিপিএম। সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা ৬৯ আসনের মধ্যে জিতেছেন ৪৯টিতে। সাগরদিঘির উপনির্বাচনে সিপিএমের সমর্থনে জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। অনেকে মনে করছেন, এই সব ফল বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে রাজ্যের পূর্বতন শাসকদল সিপিএমকে। এ ছাড়া পথে নেমেও আন্দোলন করছে বামেরা। মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ— নানা ইস্যুতেই বিজেপিকে পিছনে ফেলে বামেরা এখন ময়দানের ‘প্রধান’ বিরোধী শক্তি। অনেকেই মনে করছেন, বামেরা যে রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কালের বক্তৃতা থেকেও স্পষ্ট। বিভিন্ন সময়েই বামেদের কটাক্ষ করেছেন মমতা। শনিবার ‘সুব্রতদা’র নাম করে আসলে কি বামেদের খানিক চাপেই রাখতে চাইলেন তিনি?

Advertisement

এই প্রসঙ্গে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুব্রতবাবু মারা যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী এ কথা মনে পড়ল? যত দিন বেঁচেছিলেন, তত দিন এ সব কথা বলেননি কেন মুখ্যমন্ত্রী? প্রয়াত মানুষ প্রসঙ্গে এমন কথা বলতে নেই। এ কথা মুখ্যমন্ত্রী মনে হয় জানেন না। আর সুব্রতবাবু তো প্রকাশ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে বেদের মেয়ে জোছনা বলতেন। তা তো সবার জানা। আর বলতেন মমতা তো নতুন শাড়ি কিনে ছিঁড়ে পড়েন।’’

সিপিএম মমতার কটাক্ষে আমল দিতে না চাইলেও, মুখ্যমন্ত্রী যে তাদের বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা অনেকেই মনে করছেন। ওই অংশ মনে করছেন, আসলে সিপিএমকে খানিকটা অক্সিজেন সরবরাহ করতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। কেন? তাঁদের যুক্তি, বিজেপি গত বিধানসভা ভোটে একক বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছিল রাজ্যে। আসনের নিরিখে তৃণমূল বিরাট জয় পেলেও, বিজেপির প্রাপ্ত ভোট উপেক্ষা করা মতো নয়। বিরোধী ভোটে সিপিএম ভাগ বসালে আখেরে লাভ হবে মমতারই।

শালবনির সভায় বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসকে একযোগেই আক্রমণ করলেন মমতা। বার বার মমতার বক্তৃতায় উঠে এল ‘রাম-বাম-শ্যাম’। মমতা বললেন, ‘‘বিজেপি, সিপিএম বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে। সারা রাজ্য ছাড়লেও মেদিনীপুর ধরলে চমকাইতলা আসবে, গড়বেতা আসবে, ছোট আঙাড়িয়া আসবে, নন্দীগ্রাম আসবে, কেশিয়ারি আসবে, কেশপুর আসবে। কী করেননি আপনারা?’’ সিপিএমকে আলাদা করে নিশানা করে তাঁর কথা, ‘‘কী করেননি আপনারা? ধোপা-নাপিত বন্ধ। স্কুলে যাওয়া বন্ধ। মুন্ডু কেটে হলদি নদীর জলে ভাসিয়েছেন।’’

সুব্রত-প্রসঙ্গ টেনে ‘সিপিএম পেটাই’ তত্ত্ব শুনিয়েও মমতা অবশ্য জানান, এখনও তিনি ‘বদলার রাজনীতিতে’ বিশ্বাস করেন না। বলেন, ‘‘আমরা গুজরাতের বিজেপি নই, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নই, কেরলের সিপিএম নই যে, বদলা নিই। বদলা নয়, বদল চাই।’’

বিজেপি যদিও সিপিএমের সঙ্গে এক সারিতে শামিল হতে নারাজ। বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী শনিবার রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গেই একহাত নিয়েছেন সিপিএমকে। মালদহের সভা থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “তৃণমূল যেমন দোকান খুলে চাকরি বিক্রি করেছে, সিপিএম তেমন সেই চাকরি কিনেছে। তাই সিপিএমকে কোনও ভাবেই বিশ্বাস করবেন না। কারণ, গত ১০ বছর মানুষ সেটিং বিরোধীদের দেখেছে। বিজেপিকে মানুষ আসল বিরোধী মনে করে। তাই বিরোধী দল হিসেবে সিপিএম বা কংগ্রেসকে তৃণমূল যতই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, রাজ্যের মানুষ জানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আসলে কারা লড়াই করছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement