সিপিএমকে নিশানা মমতার।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলা ঘিরে রাজ্য রাজনীতির ময়দানে উত্তাপের আবহ। এই প্রেক্ষাপটে ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে চাকরি নিয়ে বামেদের নিশানা করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার ধর্মতলার সভায় সিপিএম জমানাকে এক হাত নিয়ে মমতার অভিযোগ, ‘‘সিপিএমের আমলে এক একজন শিক্ষকের চাকরি ১০-১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।’’ এর পরই বাম আমলে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের চাকরির প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘বাম আমলে কত চাকরি হয়েছে? অনেকের কাছে শুনেছি, একেক জন শিক্ষকের চাকরি ১০ লক্ষ, ১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। নাম বলে ছোট করতে পারি না। সিপিএমের একটা কাগজ রয়েছে (দলীয় মুখপত্র)। যত রিপোর্টার রয়েছে, তাদের অধিকাংশের স্ত্রীরা শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন।’’
এর পরই বাংলার কুর্সি থেকে সিপিএমকে হঠানোর মূল ‘হোতা’ মমতার প্রশ্ন, ‘‘কী করে চাকরি পেয়েছিল? কোয়ালিটিতে পেয়েছিল? না নম্বরের ভিত্তিতে পেয়েছিল? ছেলেরা পার্টি করবে আর বউরা চাকরি করবে! এই নীতি নিয়ে সিপিএম চাকরি দিয়েছিল।’’
২১ জুলাইয়ের সভায় মমতা।
তৃণমূলনেত্রী এ-ও বলেছেন, ‘‘নিজের কৃতিত্বে চাকরি পাবে। ভুলভ্রান্তি হলে শুধরে নেওয়া হবে। কাজ করতে গেলে ভুল হয়। ইচ্ছা করে ভুল করলে শাস্তি হবে।’’ প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে। বেআইনি ভাবে নিয়োগের জেরে আদালতের নির্দেশে স্কুলশিক্ষিকার চাকরি থেকে সম্প্রতি বরখাস্ত হয়েছেন পরেশ-কন্যা অঙ্কিতা। এই প্রেক্ষিতে মমতার ‘নিজের কৃতিত্বে চাকরি’ পাওয়ার বিষয়টি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে।
বস্তুত, এই প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা তথা সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকেও বিঁধেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘রোজ সিপিএমের বিকাশবাবু বলছেন, এটা কাটো, ওটা কাটো। আহা রে, সাধুপুরুষ! ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারেন না! আপনার আমলে বার্থ সার্টিফিকেট (জন্মের শংসাপত্র) দেওয়ার নামে.. ওই ফাইলটা বার করব? কাদের কাদের জন্মের শংসাপত্র দিয়েছিলেন? আদৌ কি তাঁরা জন্মের শংসাপত্র পাওয়ার যোগ্য ছিলেন? দেখবেন ফাইলটা ? না আমি দেখব? বদলা নয়, বদল বলেছিলাম। তাই আমরা এগুলো করিনি।’’
উল্লেখ্য, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে আদালতে। মামলাকারীদের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন। সম্প্রতি আগে আসানসোলের এক সভায় কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি তো কোর্টের অর্ডারই (নির্দেশ) মানব ভাই! আপনারা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলুন। ১৭ হাজার চাকরি রেডি (তৈরি)। পাঁচ হাজার জন নিজেদের ‘ডিপ্রাইভড’ (বঞ্চিত) মনে করেছিলেন। তাঁদের জন্যেও চাকরির ব্যবস্থা করছি। কিন্তু আমি তো কোর্টে যাইনি। আপনারা গিয়েছেন!’’ এর পরই বিকাশরঞ্জনের নাম নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিকাশবাবুদের গিয়ে বলুন, আপনার তো টাকার অভাব নেই। আপনি আমাদের চাকরি বন্ধ করেছেন, আপনিই ব্যবস্থা করে দিন।’’
বিকাশরঞ্জন অবশ্য মমতাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার একটা নির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। একটা তদন্ত কমিটি হোক। তার চেয়ারপার্সন হোন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তিনি দু’সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে তার রিপোর্ট এই রকম একটা প্রকাশ্য সভা করে জানিয়ে দিন। আমি এক হাঁড়ি রসগোল্লা খাওয়াব। আমি চ্যালেঞ্জ করছি!’’