Mamata Banerjee

নন্দীগ্রামের মামলা আড়াই বছর পড়ে রয়েছে, যা হয়েছিল মানুষ জবাব দেবে, তমলুকে বললেন মমতা

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে নন্দীগ্রামে ভোটগণনা সংক্রান্ত মামলার কথা টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৫:২৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে নন্দীগ্রামে ভোটগণনা সংক্রান্ত মামলার কথা টেনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে আক্রমণও করলেন শুভেন্দুকে। মমতার মন্তব্য, ‘‘যা হয়েছিল, মানুষ তার জবাব দেবে।’’

Advertisement

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফলঘোষণার দিন অর্থাৎ ২ মার্চ ভোটগণনার সময় নন্দীগ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। শাসকদলের দাবি, জোর করে মমতাকে হারানো হয়েছিল সেখানে। ভোটের ফলঘোষণার ঠিক পর পরই এ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভামঞ্চে বক্তৃতা করার সময় সেই প্রসঙ্গই টানলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মামলাটা এখনও বিচারাধীন। আড়াই বছর হয়ে গেল কোর্টে মামলাটা পড়ে রয়েছে। কী হয়েছে না-হয়েছে, এর উত্তর মানুষ একদিন দেবেনই।’’

নন্দীগ্রামের মামলা ছাড়াও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-সহ আরও নানা বিষয়ে নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে তমলুকের সভা থেকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গায়ের জোরে কাউকে খুন করে, কাউকে লুট করে টাকার জোরে নিজে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে অন্যদের বলছে চোর! চোরের মায়ের বড় গলা! আপনারা পকেটমার দেখেছেন? বাসে বা ট্রেনে যে পকেটমারি করে, সে-ই প্রথমে ‘পকেটমার পকেটমার’ বলে চিৎকার করে। অন্যেরা উঠে দাঁড়ালে তখন আসল পকেটমার পালিয়ে যায়!’’

Advertisement

ঘটনাচক্রে, লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এই তমলুক কেন্দ্র নিয়ে শোরগোল পড়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। রাজ্য-রাজনীতিতে জোর জল্পনা, সব কিছু ঠিক থাকলে আসন্ন লোকসভায় তমলুক থেকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়াতে পারেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার এবিপি আনন্দের সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছেন, তার পর থেকেই সেই জল্পনাই জোরালো হয়েছে। সোমবারই বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।

নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ নিয়ে বিধানসভাতেও সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। গত বিধানসভার বাদল অধিবেশনে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে দু’ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন?’’ এর পরে বিধানসভা থেকে সতীর্থদের নিয়ে ওয়াকআউট করেছিলেন শুভেন্দু। পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবও দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। বলেছিলেন, “নন্দীগ্রামে জেতার পরে আমি বিধানসভায় নন্দীগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। বিচারাধীন বিষয় বলে আমায় বলতে দেওয়া হয়নি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিধানসভায় এই বিষয়েই কথা বললেন।” বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মুছে ফেলার দাবিও জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার আগে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘাতে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে ভোট লুট হয়েছে। বিজেপি যে ক’টি আসন পেয়েছে, জানবেন সব ক’টি আসনে লুট হয়েছে। ভোটের গণনার দিন কেন লোডশেডিং হয়েছিল, তার হিসাব আমরা চাই।” এর পরেই তিনি বলেন, “ছেড়ে কথা বলব না। অনেক সহ্য করেছি।”

গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে ১৯৫৬ ভোটে শুভেন্দুর কাছে মমতা পরাজিত হয়েছিলেন। ফলঘোষণার পরেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওখানে ভোট লুট হয়েছে। আদালতে যাব আমরা।’’ পরে মমতা ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে এলেও এখনও নন্দীগ্রামের হার নিয়ে খোঁচা দেয় বিজেপি। মমতাকে ‘কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী’ বলেও ‘খোঁটা’ দেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবারও সে কথা বলেছেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামে জিতেছি বলেই আপনি কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী। অব্যক্ত যন্ত্রণা থেকে অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।” নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর জয়ের পিছনে গণনায় কারচুপির অভিযোগে ভোটগণনার পর থেকেই সরব তৃণমূল। সেই সময়ে গণনাকেন্দ্রের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দু’ঘণ্টা ধরে অনেক কারচুপি হয়েছে বলেও অভিযোগ তৃণমূলের। এ নিয়ে আদালতেও যায় শাসকদল। পুনর্গণনার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করেছিলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ ছিল, মূলত শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। প্রথমে ওই মামলাটি বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে যায়। বিচারপতি চন্দের সঙ্গে বিজেপির পূর্ব যোগ রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ‘নিরপেক্ষ’ বিচারের জন্য ওই বেঞ্চ থেকে মামলা সরানোর আর্জি জানান মমতা। তাঁর সেই আর্জি মেনে মামলা থেকে অব্যাহতি নেন বিচারপতি চন্দ। মামলাটি ওঠে বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চে।

যদিও কলকাতা হাই কোর্ট থেকে নন্দীগ্রামের ভোটগণনা মামলা অন্যত্র সরানোর আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান শুভেন্দু। কলকাতা হাই কোর্টে ওই মামলার নিরপেক্ষ বিচার পাওয়া যাবে না, এই আশঙ্কায় দেশের অন্য যে কোনও হাই কোর্টে মামলা সরানোর দাবিও জানান তিনি। কিন্তু বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ শুভেন্দুর সেই আবেদন খারিজ করে জানায়, ওই মামলা অন্য আদালতে স্থানান্তরিত করা হলে হাই কোর্টের প্রতি মানুষের আস্থা কমবে। আদালতের নির্দেশে নন্দীগ্রাম বিধানসভার সমস্ত ইভিএম ও ভিভিপ্যাট সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement