রাজ্যে দুয়ারে রেশন প্রকল্প নিয়ে কোনওরকম বাধা বা প্রতিকূলতা মানবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু রাখতে যে কোনও ‘বাধা’র সঙ্গে লড়ে যাবেন বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিধানসভা অধিবেশনে একটি বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘মানুষের জন্য দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু হয়েছিল। মানুষের স্বার্থেই দুয়ারে রেশন চলবে। সরকার কারও গায়ের জোরের কাছে মাথা নত করবে না।’’
‘কারও গায়ের জোর’ বলতে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কাদের কথা বলতে চেয়েছেন, তা তিনি বক্তৃতায় স্পষ্ট করেননি যদিও। তবে অনেকেই মনে করছেন, এ ব্যাপারে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের দুয়ারে রেশন প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলে রেশন ডিলারদের একটি সংগঠন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। মমতা হয়তো সে দিকে ইঙ্গিত করে থাকতে পারেন। আবার গত ২৮ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের দুয়ারে রেশন প্রকল্পকে ‘বেআইনি’ এবং ‘অবৈধ’ বলে মন্তব্য করে যে রায় দিয়েছিল, মমতা সেই রায়ের প্রসঙ্গেও এ কথা বলে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ ওই রায়ে কলকাতা হাই কোর্ট বলেছিল, আইনের চোখে এই প্রকল্পের কোনও ‘গ্রহণযোগ্যতা নেই’। রাজ্যের দুয়ারে রেশন প্রকল্প অবৈধ। ২০১৩ সালে প্রণীত জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী। রাজ্য ইতিমধ্যেই এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার মমতা বিধানসভায় বলেন, ‘‘দরকারে বিধানসভার মাধ্যমে কোর্টকে আবেদন করব। যাতে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে না কাঁদে।’’
দুয়ারে রেশন প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলে রেশন ডিলারদের একাংশও বলেছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলেও, রেশন ডিলারদের পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে বাড়তি খরচ, গাড়ি কেনার প্রয়োজনের কথা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রেশন দোকান এবং বাড়ির লোকেদের তালমিলের সমস্যা হতে পারে জানিয়ে রাজ্যের কাছে অতিরিক্ত অর্থও চেয়েছিল রেশন ডিলারদের একটি বড় অংশ। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু এমনও বলেন, ‘‘দুয়ারে রেশন না করতে চেয়ে প্রকারান্তরে আমরা সরকারের উপকারই করছি। সরকারের অনেক খরচ এতে বেঁচে যাবে।” বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা অবশ্য বলেছেন, ‘‘রেশন ডিলারদের ৪৮০ কোটি টাকা ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছে। আমি জেনেছি, সবাই দুয়ারে রেশন নিয়ে আপত্তি করেননি। আমি এঁদের সঙ্গে বৈঠকও করেছি। কিন্তু সমাজে ৯৯ শতাংশ ভাল লোক থাকলেও ১ শতাংশ মনে করে তারা কেবল নিজেরাই খাবে।’’ মমতা বুঝিয়েছেন বাকিরা সেই পর্যায়ে পড়েন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে দুয়ারে রেশন প্রকল্প শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বিধানসভায় বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পরই মমতা ঘোষণা করেন, এখন থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই শুরু দুয়ারে রেশন প্রকল্প। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সে কথা মনে করিয়ে দিয়েই মমতা বলেন, ‘‘মানুষের স্বার্থে দুয়ারে রেশন চলবে। কার ও গায়ের জোরের কাছে সরকার মাথা নত করবে না। তার জন্য যত দূর যাওয়ার যাব।’’