সাকেত গোখলেকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন মমতা। ফাইল চিত্র।
দিল্লির বঙ্গভবন থেকে সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে গিয়েছে গুজরাত পুলিশ। সোমবার এমন অভিযোগই করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন অধিকারে বঙ্গভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে যাওয়া হল, এই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘বঙ্গভবন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্পত্তি। মুখ্যসচিবকে বলব, অনুমতি ছাড়া সেখানে গেলে আমাদেরও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
ঘটনাচক্রে, দিল্লির বঙ্গভবন থেকেই গত ২৯ ডিসেম্বর তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলেকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাত পুলিশ। সাকেতের নাম না-করে সেই প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গভবনে সিসি ক্যামেরা খুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন মমতা। সোমবার মুর্শিদাবাদে মমতা বলেন, ‘‘গত পরশু রাতে বেআইনি ভাবে গুজরাত পুলিশ দিল্লি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনের সব সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়ে গিয়েছে। বঙ্গভবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকেন। আমি দিল্লিতে গিয়ে অভিষেকের (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) বাড়িতে না থাকলে বঙ্গভবনে থাকি। রাজ্যপাল, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকেন। সাংবাদিকরাও সেখানে থাকেন, তাঁরা কোন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছেন, সেটা ওরা (বিজেপি) জেনে যাবে!’’
অতীতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ করেছিলেন মমতা। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের রণকৌশল স্থির করতে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন সুব্রত বক্সী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। আলোচনা চলাকালীন তাঁরা কেউ মোবাইল ব্যবহার করেননি। তৃণমূলের অভিযোগ, ফোনে ‘নজরদারি’ চালিয়ে সেই বৈঠকের খবর ‘তুলে নেওয়া’ হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কাজে লাগানো হয়েছিল বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। এ বার বঙ্গভবনের সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুললেন মমতা।
গুজরাত পুলিশের এই অভিযানের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপিকে নিশানা করেছেন তৃণমূলনেত্রী। বলেছেন, ‘‘কে এই অধিকার দিল? কে দিল এই ঔদ্ধত্য? মনে রাখবেন, আমি বুলডোজারের পক্ষে নই। তবে গণতন্ত্রে যারা বুলডোজার চালায়, তাদের ক্লোজার হবে।’’
গত মাসে তিন বার গ্রেফতার হয়েছেন সাকেত। গুজরাতের মোরবীতে সেতু বিপর্যয়ের ঘটনার পর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল বলে সমাজমাধ্যমে দাবি করেছিলেন সাকেত। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল, তথ্য জানার অধিকার আইনে ওই সংক্রান্ত কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। ওই বিষয়ে ‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানোর অভিযোগে গত ৬ ডিসেম্বর প্রথম সাকেতকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় জামিন পাওয়ার পর ৮ ডিসেম্বর আবার গ্রেফতার হন সাকেত। সে বার তাঁকে ‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে মোরবী পুলিশ। ওই একই মামলা দায়ের হয়েছিল মোরবীতেও। এর পর গত ২৯ ডিসেম্বর দিল্লি থেকে আবার গুজরাত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সাকেত। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে জনতার দানে পাওয়া টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ এনেছে গুজরাতের পুলিশ।
সাকেতের গ্রেফতারির ঘটনা ‘দুঃখজনক’ বলে আগে মন্তব্য করেছিলেন মমতা। সোমবার সাকেতের নাম নেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের এক জন সমাজকর্মীকে বঙ্গভবন থেকে বেআইনি ভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ সাকেতের গ্রেফতারির প্রসঙ্গে কথা বলার পরই বঙ্গভবনে সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে সরব হন মমতা।