বামেদের বনধের তীব্র বিরোধিতা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। - ফাইল চিত্র
ধর্মঘটের তীব্র বিরোধিতা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনের নামে ‘গুন্ডাগিরি’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ‘বন্ধকে ধিক্কার’ জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যে সব ইস্যুতে আন্দোলন হচ্ছে, তাতে সমর্থন থাকলেও বামেদের এই ধর্মঘট ‘সস্তায় প্রচার পাওয়া’র রাজনীতি বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে মমতার হুঁশিয়ারি, কেউ সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে তার বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটকে ঘিরে রাজ্যে একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছড়িয়েছে। ভাঙচুর, মারধর থেকে জোর করে দোকানপাট বন্ধ করার অভিযোগও উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই বিষয়গুলি তুলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “বামেদের ন্যূনতম মূল্যবোধ নেই। ট্রেনের নীচে বোমা রেখে দেওয়া, এটা কোনও আন্দোলন নয়, এটা গুন্ডামি। কোথাও বাইক আরোহীকে মারধর করা হচ্ছে, কোথাও বাস যাত্রীদের আটকানো হচ্ছে, কোথাও পাথর ছোড়া হচ্ছে। এটা দাদাগিরি, আন্দোলন নয়। আমি ওদের এই আন্দোলনকে ধিক্কার জানাচ্ছি।”
এই প্রসঙ্গেই নিজের আন্দোলনের কথাও তুলে ধরেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, “আন্দোলন করতে হয় ধারাবাহিক ভাবে। আন্দোলন করা অনেক কঠিন, রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। আমি ২৬দিন আন্দোলন করেছিলাম কৃষিজমি নিয়ে। একটা বাসে পর্যন্ত কেউ হাত দেয়নি।”
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) নিয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলন চলছেই। সেই আন্দোলনের কার্যত সামনের সারিতে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে আবার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ মুখোশধারীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই সব প্রসঙ্গ টেনেও বামেদের নিশানা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সিএএ, এনআরসি, এনপিআর নিয়ে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন করেছি। সরকারে থেকেও আমরা প্রতিবাদ করছি। জেএনইউ-তে হামলার পরেই আমি নিন্দা করেছি। আমরা টিম পাঠিয়েছি। আমরা লখনউতে, অসমে টিম পাঠিয়েছি। কিন্তু ওরা কী করেছে? দিল্লিতে একটাও আন্দোলন করেছে? একটাও মিছিল করেছে?”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য:
বামেদের প্রতি মমতার কটাক্ষ, “ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে বনধ-অবরোধের নামে তাণ্ডব চালাবেন না। আজ এমনিই সাধারণ মানুষের রোজগার কমে গিয়েছে। বন্ধ করলে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। সেটা বোঝা উচিত। প্রতি বছর তিন চারটে বন্ধ ডাকছে, অথচ প্রতিটাই ব্যর্থ হচ্ছে। আমি জানি না, কেন এরা বন্ধ ডাকে। সস্তায় জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এই জনপ্রিয়তা বা প্রচার পাওয়ার চেয়ে রাজনৈতিক মৃত্যু হওয়া ভাল। ৩৪ বছরে একে তো কিছু করেনি, তার উপর যা তৈরি করছি, গুন্ডামি করে ভেঙে দিচ্ছে। উন্নয়নকে চোখে সহ্য করতে পারছে না।”
রাজনৈতিক এই বার্তার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি সিপিএমের মতো গুলি পন্থায় বিশ্বাস করি না। কিন্তু যেখানে দরকার পুলিশ আইনত ব্যবস্থা নেবে। যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। আইন আইনের পথে চলবে।” একই সঙ্গে তাঁর আবেদন, “এখনও ওঁদের আবেদন করব, গণতান্ত্রিক আন্দোলন করুন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন। এ ভাবে আন্দোলনের নামে গুন্ডাগিরি বন্ধ করুন। এই করতে করতে পার্টিটা সাইনবোর্ডে এসে ঠেকেছে।”