ফের রাজ্যপালকে পত্রাঘাত মুখ্যমন্ত্রীর।
সঙ্ঘাত আরও বাড়ল রাজভবন এবং নবান্নের মধ্যে। গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল যে দু’টি চিঠি রাজ্যপাল পাঠিয়েছিলেন, শনিবার ১৩ পাতার পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে তার জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালকে বার বার মনে করানোর চেষ্টা করলেন, তাঁর ‘সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা’র কথা। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল পদে আসার পর থেকে যে সব চিঠি তিনি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকারের উদ্দেশে, সেগুলিতে নজিরবিহীন আক্রমণাত্মক এবং কটূ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন এই চিঠিতে লিখলেন। এখন যে সঙ্কটের সময় চলছে, তার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের সমালোচনা না করে সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত রাজ্যপালের, লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত মাসের শেষ দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের মধ্যে পত্রযুদ্ধ শুরু হয়। সরকারি কাজে নাক গলানো নিয়ে প্রথমে রাজ্যপালকে পাঁচ পাতার কড়া চিঠি পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। ধনখড়ের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ধর্ম ও শিষ্টতার গণ্ডি ছাড়ানোর পাশাপাশি, তাঁর সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের আক্রমণ এবং রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৩ ও ২৪ এপ্রিল তার পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকে ২ ও ১৪ পাতার দু’টি চিঠি লেখেন রাজ্যপাল। তার পর থেকে টুইটারেও লাগাতার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করে আসছিলেন তিনি। তার মধ্যেই এ দিন তাঁকে চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে কোভিড সংক্রমণের মোকাবিলা এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স নিয়ে ব্যস্ত থাকাতেই চিঠির জবাব দিতে সামান্য দেরি হয়ে গিয়েছে বলে রাজ্যপালকে কটাক্ষও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন, যবে থেকে ক্ষমতায় এসেছেন, তবে থেকেই তাঁর এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করে আসছেন রাজ্যপাল। ২৩ ও ২৪ তারিখের চিঠিতে রাজ্যপাল ব্যবহৃত বাক্যাংশ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘এই ধরনের শব্দ, বয়ান ও ভঙ্গিতে এক জন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে এক জন রাজ্যপাল চিঠি লিখছেন, এটা ভারতের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব।’’ তবে রাজ্যপাল বার বার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেও, তার জবাবে রাজ্য সরকার যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে বলেও মনে করিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের ক্ষমতা যে সীমিত এবং তাঁর অবস্থান যে আলঙ্কারিক, এ দিন ফের এক বার তা ধনখড়কে মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের কিছু উল্লেখযোগ্য রায় তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, রাজ্যপাল পদটির সীমাবদ্ধতা কতখানি।
আরও পড়ুন: রাজ্যের কোভিড তথ্য নিয়ে ফের মমতাকে তোপ ধনখড়ের
রাজ্যপাল চান বা না চান, তাঁর পছন্দ হোক বা না হোক, তিনি কিন্তু রাজ্যের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য— মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘‘একটা কথা আপনি বোধহয় ভুলে গিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আপনি একমত হোন বা না হোন, রাজ্যের রীতি নীতি আপনার পছন্দ হোক বা না হোক, রাজ্যের সিদ্ধান্ত মানতে আপনি বাধ্য। কোনও কিছু অপছন্দ হলে বিনীত ভাবে আমাকে তা জানাতে পারেন। কিন্তু রাজ্যের সিদ্ধান্তে সই করতে বাধ্য আপনি।’’ মমতা আরও লেখেন, ‘‘সত্য সব সময়ই তিক্ত। কিন্তু এই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে আমার পদটা বেছে নেওয়া উচিত ছিল আপনার।’’ নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের কথোপকথন এবং রাজ্যের লোগো রয়েছে এমন কোনও চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা নিয়েও ধনখড়কে সতর্ক করেন মমতা।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এর আগেও রাজ্যের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়েছেন জগদীপ ধনখড়। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি যে আকার ধারণ করেছে, তাতে সরকারকে তিনি ব্যতিব্যস্ত না করলেই পারেন বলে চিঠিতে মন্তব্য করেন মমতা। চিঠির শেষে ধনখড়কে খোঁচা দিয়ে মমতা লেখেন, ‘‘যদিও আমি নিশ্চিত যে, আপনি এই চিঠির জবাবও আগের মতো করেই দেবেন, কিন্তু আপনার বিশেষণগুলির উত্তর না দেওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। কারণ আমার মনে হয় যে, ভারতের অন্যতম বৃহৎ রাজ্যের ব্যস্ত মুখ্য কার্যনির্বাহী হিসেবে আমার সময়টা অনেক ভাল কাজে লাগে।’’ চিঠির শেষ স্তবকে মুখ্যমন্ত্রী পারস্পরিক সহযোগিতার কথাও বলেছেন। অতিমারির এই সঙ্কটে রাজ্যপালকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘পোস্ট’ করে রাজ্য জুড়ে গ্রেফতার ১৩০ জন
রাজ্যপালের টুইট।
অন্য দিকে, করোনা পরিসংখ্যান ধাপাচাপার অভিযোগ তুলে এ দিনই মমতাকে টুইটারে কটাক্ষ করেন ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পেয়েও টুইটারে প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেননি তিনি। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বয়ানে কোনও সারবত্তা নেই। তবে রাজ্য সরকাররে সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতার যে অনুরোধ তিনি করেছেন, তা প্রশংসনীয়। এই মুহূর্তে মাথার উপর ছাদ ভেঙে পড়ার যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তাতে আমি প্রথম থেকেই একজোট হয়ে কাজ করার কথা বলে আসছিলাম। আশা করি সেই মতোই চলবেন তিনি।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাব যে তিনি দেবেন, তা-ও জানিয়ে রাখেন ধনখড়।