মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহারের চান্দামারিতে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দে
সীমান্ত-জেলা কোচবিহারে এসে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের শুরুতেই বিএসএফকে (সীমান্ত রক্ষী বাহিনী) নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহারের চান্দামারিতে প্রাণনাথ হাইস্কুলের মাঠে জনসভায় বিএসএফের ‘মারধর’ ও ‘গুলিতে’ নিহত দু’জনের পরিবারের সদস্যদের হাজির করানো হয়। তাঁদের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুটি পরিবার এখানে এসেছেন। যাদের পরিজনদের বিএসএফ গুলি করে মেরেছে। এর আগেও কয়েক জনকে গুলি করে মেরেছে। শীতলখুচিতেও চার জনকে গুলি করে মেরেছে। আমি সেই পরিবারগুলিকে আপনাদের সামনে ডাকব। এক বার আপনারা ওঁদের হয়ে ঈশ্বরের কাছে, আল্লার কাছে, মায়ের কাছে, সবার কাছে প্রার্থনা করুন।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারে গুলি করে মারাটা যেন এক অধিকারের মধ্যে পড়ে গিয়েছে। এরা করবে দেশ শাসন? আমি সবাইকে খারাপ বলি না। কিন্তু প্রশাসনকে বলব দৃষ্টি রাখতে।’’ বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে। তারা জানিয়েছে, বিএসএফ দায়িত্ব নিয়ে সীমান্ত এলাকায় কাজ করছে। বিএসএফ কাউকে ভয় দেখিয়েছে এমন অভিযোগ বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বা কোনও সহযোগী সংস্থার কাছে নেই। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সৌজন্যের অভাব। আসলে রাজনৈতিক কারণে বিএসএফকে দিয়ে এ কথা বলানো হয়েছে।’’
মমতার মন্তব্য, ‘‘পনেরো কিলোমিটার যেটা ছিল, গায়ের জোরে পঞ্চাশ কিলোমিটার করেছে এক তরফা। আমার কাছে খবর আছে, নির্বাচনের সময় সীমান্তে সীমান্তে গিয়ে আপনাদের ভয় দেখাবে। বলবে, ‘তুলে নেব। সিবিআই লাগাব, ইডি লাগাব’। আমি বলি, কিছু করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এটা রাজ্য সরকারের অধীনে পড়ে, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পড়ে না। ভয় দেখালে অভিযোগ করবেন, ভয়ে ঘরে বসে থাকবেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘মনে রাখবেন যে শহিদ পরিবার আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, তার বদলায় আপনাকে তৃণমূলকে তিনটি ভোট দিতে হবে, যাতে আপনার পরিবার যাতে কোনও দিন খালি না হয়ে যায়, সে দিকে আপনাকে লক্ষ্যরাখতে হবে।’’
১৫ জুন মেখলিগঞ্জ ব্লকের বাগডোগরা ফুলকাডাবড়ি পঞ্চায়েতের ৯৪ ফুলকাডাবড়ির চারুবাগান এলাকায় গৌতম বর্মণকে (২৭) গুলি করে মারার অভিযোগ ওঠে বিএসএফের বিরুদ্ধে। গৌতমের বাবা নৃপেন, মা সুবর্ণা এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের নিরীহ ছেলেকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। মুখ্যমন্ত্রী কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ শীতলখুচির আর এক বাসিন্দা জালাল মিয়াঁকে (৪০) বিএসএফ জওয়ানেরা পিটিয়ে মারে বলে অভিযোগ। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও সভায় ছিলেন।
বিএসএফ অবশ্য দাবি করেছিল, নিহতেরা পাচারকারী। একটি ক্ষেত্রে বিএসএফ জওয়ানদের উপরে পাচারাকারীরা হামলা চালালে, আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে হয়। অন্য ক্ষেত্রে সংঘর্ষ বেধেছিল।