ফাইল চিত্র।
এ রাজ্যে বিজেপি সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে চাইছে বলে রাজ্যপাল-বিতর্কে তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রা জোগালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রোজকার মতো বৃহস্পতিবারও বিবিধ বিষয়ে রাজ্যকে খোঁচা দেন রাজ্যপাল জগীপ ধনখড়। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম ছিল তার অন্যতম। এরই পাশাপাশি আজ শুক্রবার তাঁর ফরাক্কা সফরে রাজ্য সরকার হেলিকপ্টার দেয়নি বলে ক্ষোভ উগরে বিবৃতি দিয়েছে রাজভবন।
কলকাতায় জওহরলাল নেহরুর মূর্তিতে মালা দিতে এসে রাজ্যপাল এদিন বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে গিয়েছিলাম বলে অনেক কথা উঠছে। জেলাশাসককে জানিয়েই তো গিয়েছিলাম। কোথাও কিছু লুকনোর থাকলে তা নিয়েই মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। সিঙ্গুরে কি কিছু লুকনোর আছে?’’ তারপরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিঙ্গুরে গিয়ে ভাল করে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে চাই। নন্দীগ্রামে থেকেও সব বুঝতে চাই।’’
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম নিয়ে রাজ্যপালের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে তৃণমূলে। এদিন সন্ধ্যায় জবাব দিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি সাংবিধানিক পদ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁরা বিজেপি’র মুখপাত্রের মতো আচরণ করছেন। আমাদের রাজ্যেও একজন রয়েছেন। তাঁরা সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন। মনোনীত কিছু লোক বাড়াবাড়ি করছেন।’’ তারপর নাম না করেই মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘কোনও কোনও সময়ে কেউ ( রাজ্যপাল) কেন্দ্রকেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এটা দেখা উচিত।’’ প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার সম্পর্কে আগেও একাধিক মন্তব্য নিয়ে রাজ্যপালকে ‘বিজেপি’র লোক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন মমতা।
আরও পডু়ন: সরকারি কর্মীদের কাজে মন নেই, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
এদিনই রাজভবনের একটি প্রেস বিবৃতিতে হেলিকপ্টার না পাওয়া নিয়ে রাজ্যপালের উষ্মার কথা জানানো হয়েছে। শনিবার ফরাক্কায় সস্ত্রীক একটি কলেজের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা রাজ্যপালের। তার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছিল। রাজভবন বিবৃতিতে জানায়, বিষয়টি মুখ্যসচিবকে জানিয়ে অপেক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু বিলম্ব দেখে মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও তা আনা হয়। ফের অপেক্ষা করেও সেখান থেকে কোনও জবাব মেলেনি।
সড়কপথে ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আসা-যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে রাজভবনের অসন্তোষই স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে তা নিয়ে রাজ্যপালকেই আক্রমণ করে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হেলিকপ্টারের খরচ তো রাজ্যের মানুষ বহন করেন। তাদের জানাতে হবে, কী কারণে তাঁর হেলিকপ্টার প্রয়োজন। সকালবেলায় উঠেই তিনিই রাজনীতির বাজারে বেরিয়ে পড়বেন এটা তো চলতে পারে না! মনে রাখতে হবে, মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে ঘুর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে গিয়েছিলেন দুই ২৪ পরগনায়।’’
আরও পডু়ন: দীর্ঘ ন’বছর পরে প্রেসিডেন্সি ফের এসএফআইয়ের
এদিকে নবান্নের সঙ্গে এই রাজ্যপালের এই সংঘাতে কার্যত রাজ্যপালের দিকেই আঙুল তুলেছেন লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল পদ সাংবিধানিক হলেও আলঙ্কারিক। রাজ্যপালের উচিত রাজ্য সরকারের আলোচনা করে, সমঝোতা করে কাজ করা। সংঘাতে যাওয়া উচিত নয়।’’