শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
তৃণমূলের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দীর্ঘ টানাপড়েনে ইতি টানতে এ বার সক্রিয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের বাড়িতে রবিবার সকালে হাজির হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত রতন মুখোপাধ্যায়। কালীঘাটে মমতার বাড়ি লাগোয়া অফিসের সর্বময় কর্তা যিনি, সেই রতন এ দিন শোভনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। দলের জন্য আবার পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হতে এবং বড় দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে শোভনকে রতন অনুরোধ করেছেন বলে খবর। যে রকম আন্তরিকতা নিয়ে দু’জন এ দিন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা যাচ্ছে, তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
রবিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হাজির হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব কাছের বৃত্তে থাকা রতন মুখোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, শনিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী ফোন করেন শোভনকে। ওই ব্যবসায়ী শোভনকে সক্রিয় ভাবে দলে ফেরার অনুরোধ করেন। কিন্তু শোভন তাঁকে কোনও আশ্বাস দেননি। তবে রবিবার রতন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মানভঞ্জনের ইঙ্গিত মিলেছে বলে তৃণমূলের একটি অংশের দাবি।
শোভনের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে এ দিন রতন মুখোপাধ্যায় প্রায় ১ ঘণ্টা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। যে মেজাজে তাঁরা আলোচনা করেছেন, তাতে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের উষ্ণতার ছাপ ছিল বলে শোভন ঘনিষ্ঠদের দাবি। তৃণমূল থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পরেও দলের হয়ে কিছু দায়িত্ব শোভন নীরবে পালন করে যাচ্ছিলেন। সম্প্রতি সে সবও তিনি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে সে সব তিক্ততা লেশমাত্র ছায়া ফেলতে পারেনি বলে খবর।
তৃণমূল থেকে নিষ্ক্রিয় হওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই শোভনের বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনা তৈরি হয়েছিল। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সে জল্পনা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক শিবিরে এমন শোনা গিয়েছে যে, শোভন বিজেপিতে যোগ দিয়ে আগামী বছর কলকাতা পুরভোটের দায়িত্ব নিতে পারেন। শোভনকে দলে পাওয়ার জন্য তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্ব নিরন্তর যোগাযোগও রাখছে। আজ নয়াদিল্লিতে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে নিয়ে অমিত শাহের যে বৈঠক নির্ধারিত, সে বৈঠকে শোভনকে নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা বলেও বিজেপি সূত্রের খবর। আজ আলোচনা হয়ে গেলে দু’এক দিনের মধ্যেই শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দিল্লি যাওয়ার অনুরোধ আসতে পারে বলেও জানা যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত শোভনের বাড়িতে পৌঁছনোয় পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
আরও পডু়ন: ‘সংসদ চলছে বলে নখ-দাঁতগুলো দেখতে পাচ্ছেন না’, মমতাকে হুঁশিয়ারি মুকুলের
শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলে ফের সক্রিয় করতে প্রথমে উদ্যোগী হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি গত কয়েক মাসে শোভনকে একাধিক বার ফোন করেছেন। কিন্তু প্রাক্তন মেয়র তাতে খুব একটা ইতিবাচক সাড়া বর্তমান মেয়রকে দেননি। এর পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ময়দানে নামান তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে গত রবিবার নিজের বাড়িতে ডেকে বৈঠক করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ। শোভন যাতে ফের তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হন, তা নিশ্চিত করতে বৈশাখীকে পার্থ অনুরোধ করেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। কিন্তু পার্থকে বৈশাখী কোনও আশ্বাস দেননি বলেও জানা যায়। আনন্দবাজারকেও বৈশাখী বলেন যে, ‘‘তৃণমূলের সবচেয়ে বড় আপত্তি তো আমাকে নিয়েই ছিল। গত কয়েক মাসে কী এমন ঘটল যে, আমি আবার শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলের হয়ে মাঠে নামাতে সক্রিয় হয়ে উঠব?’’
শোভনকে দলে ফেরাতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয় হন বা না হন, এখনই যাতে শোভন দিল্লি চলে না যান, সেটুকু অন্তত নিশ্চিত করতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় অনুরোধ করেছিলেন বৈশাখীকে। খবর শোভনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের। বৈশাখী সেটুকু করেছেন বলে তৃণমূলের একটি অংশের দাবি। আর তার মধ্যেই রবিবার সকালে শোভনের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন রতন মুখোপাধ্যায়।
আরও পডু়ন: কলকাতায় চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানি, ১০০ ডায়ালে ফোন পেয়ে ৭ মিনিটেই এক অভিযুক্তকে ধরল পুলিশ
রতন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠক এ দিন হয়েছে, সে কথা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন। তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘রতন মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন অবশ্যই। তবে রতন মুখোপাধ্যায়ের কথা শুনে তো শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের থেকে দূরে সরে যাননি। তাই ওঁর কথা শুনে শোভন চট্টোপাধ্যায় ফের তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমার মনে হয় না। আমি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সে ভাবেই চিনি।’’ শোভন কিছুতেই তৃণমূলে ফিরবেন না, এমন কথাও কিন্তু বৈশাখী জোর দিয়ে বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূলে ফিরবেন কি না, সেটা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’
এই বৈঠকের বিষয়ে তৃণমূলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিন্তু কিছুই জানানো হয়নি।