তৃণমূলে যোগ দিলেও মুকুল রায় খাতায় কলমে এখনও বিজেপি বিধায়ক। ফাইল চিত্র
বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-র চেয়ারম্যান কে হবেন তা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি সঙ্ঘাতের মধ্যেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, বিজেপি-র টিকিটে বিধায়ক হলেও মুকুল রায়কে সমর্থন দেবে তৃণমূল।
কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকলেও রেওয়াজ মেনে বরাবর প্রধান বিরোধী দলের কোনও বিধায়ককেই পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হয়। মুকুল তৃণমূলে যোগ দিলেও খাতায়কলমে তিনি কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে জিতে আসা বিজেপি বিধায়ক। সেই হিসেবে মুকুলকে পিএসি চেয়ারম্যান করা হলে বিধানসভার রেওয়াজ ভাঙা হবে না বলেই দাবি তৃণমূলের। সেটাই যেন স্পষ্ট হল মমতার বক্তব্যে। বৃহস্পতিবার নবান্নে হওয়া সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘মুকুল তো বিজেপি-র সদস্য। কালিম্পং-এর বিধায়ক মানে বিনয় তামাং-এর দল সমর্থন দিয়েছে। আমরাও সমর্থন দেব।’’ একই সঙ্গে মমতা জানান, বিধানসভার স্পিকার নিয়ম মেনে যা করার করবেন।
বুধবারই বিজেপি ওই কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ ছ’জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে বালুরঘাটের বিধায়ক অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ির নামও। একই সঙ্গে বিজেপি যে অশোককে পিএসি-র চেয়ারম্যান করতে চায় সেটা জানিয়ে স্পিকারকে একটি চিঠি দিয়েছে। অন্য দিকে, মুকুলও পিএসি-র সদস্য হওয়ার জন্য বুধবার তাঁর মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সেই মনোনয়নের প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে নাম রয়েছে যথাক্রমে কালিম্পং-এর নির্দল বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচা এবং এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ জানার। এর ফলে বিধানসভায় মুকুল বনাম অশোক লড়াইয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছি। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করব। ভোটাভুটি হলে হবে। ভোট হলে আমরাই জিতব।’’
মুকুলকে পিএসি চেয়ারম্যান পদে বিজেপি মেনে নেবে না বলে বুধবারই জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘দলত্যাগ করা মুকুল রায়ের বিধায়ক পদই বেশি দিন থাকবে না। তার পরে তো পিএসি-র চেয়ারম্যান হওয়ার প্রশ্ন।’’ তবে বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী, পিএসি-র চেয়ারম্যান মনোনয়নের দায়িত্ব একক ভাবে স্পিকারের হাতেই। সাধারণত বিরোধী দলের বিধায়ককে এই কমিটির মাথায় বসানো হলেও সেটা রীতি মাত্র, নিয়ম নয়। যদিও বরাবর শাসক ও বিরোধীদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই সেটা ঠিক হয়। এ বার বিজেপি বিধায়ক মকুলকে যে ভাবে ওই কমিটির মাথায় বসানোর চেষ্টা হচ্ছে তেমন নজির আগেও দেখা গিয়েছে। ২০১৬ সালে বিরোধী দল কংগ্রেসের আপত্তি সত্ত্বেও পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছিল বিধায়ক মানস ভুঁইয়াকে। সবং থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়েও তিনি তখন তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগও দিয়েছিলেন মানস।