বৈভবে ভেসে যাবেন না— শিলিগুড়ি পুরসভার নতুন নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির কাছে রাজ্য সচিবালয়ের শাখা উত্তরকন্যায় তিনি বৈঠক করেন কাউন্সিলরদের সঙ্গে। এর আগে ক্ষমতায় না-থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অনেক সময়েই বাড়ি-গাড়ি, জায়গা-জমি, এমনকি ভিন্ রাজ্যে হোটেল কিনে ফুলে ফেঁপে ওঠার অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, শিলিগুড়িতে কাউন্সিলরদের বৈঠকে বললেও এই বার্তা তিনি দলের সবাইকেই দিলেন। সম্প্রতি তাঁর সায় নেই বলে কলকাতায় দলের বিলাসবহুল ভবন তৈরির ক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে মমতা জানান, ‘মাথা নত করে সাধারণ জীবনযাপন করেই’ মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, দু’বেলা দুটো ভাত খাওয়া, মাথার উপর একটা ছাদ, যাতায়াতের একটি সাইকেল-স্কুটার বা একটা গাড়ি। সেটাও ব্যাপার নয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি যেন চাহিদা না করি আমরা।’’ আক্ষরিক অর্থে না হলেও এলাহি জীবনযাপন এবং অর্থ তছরূপ বা দুর্নীতির বিরুদ্ধেই এই বার্তা বলে মনে করছেন দলের কাউন্সিলরদের কয়েক জন। মুখ্যমন্ত্রী যে নিজের দলের কাউন্সিলরদের উপর নজর রাখবেন, সে কথাও উত্তরকন্যায় কাউন্সিলরদের সঙ্গে দেখা করার সময়ই স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
দলের নেতা-কর্মীদের জীবনযাপন নিয়ে মমতা অবশ্য নতুন মুখ খুলছেন না। সূত্রের খবর, এর আগে দক্ষিণ দমদম এলাকার এক কাউন্সিলরের প্রাসাদোপম বাড়ি, বৈভবের কথা জানার পরে নেত্রী তাঁকে এ বারে টিকিটই দেননি। নন্দীগ্রামে শেখ সুফিয়ানের বাড়ি দেখেও এক সময়ে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও গত বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে সুফিয়ানই তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছিলেন। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী সেই প্রসঙ্গ তুলেই বলেন, ‘‘এর আগে নন্দীগ্রামে গিয়ে জাহাজবাড়ি
দেখে উনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে জাহাজবাড়িও আছে,
শেখ সুফিয়ানও আছে। না আঁচালে কোনও বিশ্বাস নেই।’’ একই ভাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘চ্যারিটি বিগিংস অ্যাট হোম’। আগে তাঁর পরিবার থেকে এটা শুরু করুন, তার পরে অন্যকে বলবেন।’’