Mamata Banerjee

‘আমার উপরে আস্থা রাখুন, কথা দিচ্ছি, কাউকে রেয়াত করা হবে না, নাটের গুরুদের ধরা হবেই’: মমতা

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও এক বিবৃতিতে কঠোর হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বলেছেন রাজ্য সরকারকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৫৪
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে হাওড়ায় গোলমালের পরিপ্রেক্ষিতে ফের শান্তিরক্ষার আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আমার উপরে আস্থা রাখুন। কথা দিচ্ছি, কাউকে রেয়াত করা হবে না। নাটের গুরুদের ধরা হবেই।’’ পাশাপাশি, এ দিন তিনি পুলিশের একাংশের ‘ব্যর্থতা’র সমালোচনা করে জানান, গাফিলতি থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও এক বিবৃতিতে কঠোর হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বলেছেন রাজ্য সরকারকে। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির দাবি, হাওড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাওড়ার শিবপুরে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে ঘটনার সূত্রপাত। মুখ্যমন্ত্রী তখন ছিলেন রেড রোডের ধর্নামঞ্চে। সেখান থেকেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও মিছিল আটকাইনি। শুধু বার বার বলেছিলাম, অশান্তি করবেন না।’’ এ দিন তিনি আরও এক বার সেই কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘যারা এই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে, আইন অনুযায়ী তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

Advertisement

ঘটনার ‘প্রতিবাদ’ করতে গিয়ে পরিস্থিতি যাতে নতুন করে আরও জটিল না হয়, সেই জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘প্রতিবাদের ভারটা আমার উপরে ছেড়ে দিন। যাঁদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভেঙেছে, তাঁদের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী যেমন একদিকে পুলিশের তরফে কিছু ব্যর্থতা রয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন, তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আঙুল তুলেছেন বিজেপি ও তার সহযোগীদের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশের অনুমতি ছাড়াই দু’টি মিছিল হয়েছে। বিজেপির প্ররোচনায় এই অশান্তি হয়েছে। এবং পুলিশের দেওয়া কোনও শর্তই পূরণ করেননি উদ্যোক্তারা।’’ আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘পুলিশকে নিষ্ক্রিয় রেখে গন্ডগোলের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।’’

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘আমি কী করি, সেটা দেখতে থাকুন। আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। যারা এ সব করে, তাদের কী ভাবে শায়েস্তা করতে হয়, তা আমি জানি। কিছু গ্রেফতার হয়েছে, আরও গ্রেফতার হবে।’’ মমতার আরও বক্তব্য, ‘‘দুষ্কৃতীদের কোনও ধর্ম, সম্প্রদায় নেই। দুষ্কৃতীরা দুষ্কৃতীই। তাই ঘটনার সুযোগ নিয়ে প্ররোচনা ছড়ানোর চেষ্টা রাজ্যের প্রশাসন ও জনগণ একসঙ্গে রুখবে।’’

পুলিশের ব্যর্থতার কথা বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যখন গাদাগাদা লোক ঢুকে গিয়েছে, তখন পুলিশ গুলি চালালে যে কারও মাথায় লাগতে পারত। ফলে কিল খেয়ে কিল হজম করতে হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আমরা আটকাতে পেরেছি। এখানে হল না। এই জায়গায় অবশ্যই পুলিশের ব্যর্থতা আছে, স্বীকার করি। যা পদক্ষেপ করার করব।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ওদের (পুলিশ) কেউ কেউ ভয় পেয়েছে। অনেকেই ভাল কাজ করে। কিন্তু একাংশ সমঝোতা করে চলে। এঁদেরও বরদাস্ত করব না। আমি যদি ভুল করি, তাহলে আমাকেও বরদাস্ত করবেন না।’’

পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বগটুই ও সাগরদিঘির পরে নিজের ভোটব্যাঙ্ক সরে যাচ্ছে দেখে তিনিই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।’’ কেন্দ্রীয় সংস্থা এনআইএ-কে দিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘দেশের ৬-৭টি রাজ্যে এই রকম ঘটনা ঘটেছে। পদত্যাগের প্রশ্ন উঠলে তো আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরানো উচিত প্রধানমন্ত্রীর।’’ তদন্তের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতেই শুভেন্দু কেন্দ্রীয় এজেন্সি চাইছেন বলেও কটাক্ষ করেছেন অভিষেক।

পরপর দু’বছর হাওড়ার একই জায়গায় কী ভাবে অশান্তি হয়, সেই প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। বিজেপি এবং তৃণমূলকে দায়ী করার পাশাপাশি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, গোলমাল করার পরিকল্পনা ছিল। যদি জানতেন পরিকল্পনা ছিল, তা হলে নবান্নে বসে নিয়ন্ত্রণ না করে রেড রোডে বসে থাকলেন কেন? অন্য সময়ে তো হাওড়াতেই থাকেন। তা হলে কি এ সব জেনেই ধর্নার জন্য এই সময়টা বেছে নিয়েছিলেন? উনি নিজেই পুলিশমন্ত্রী। নীচের দিকের কিছু পুলিশকে দায়ী করে তিনি দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement