রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
বাংলা সামাজিক ন্যায় এবং আত্মসম্মানকে প্রাধান্য দেয়। সোমবার কলকাতায় নাগরিক সংবর্ধনার মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সেই মঞ্চেই রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জি, ‘‘আপনি সংবিধানের রক্ষক। দয়া করে সকলের অধিকার রক্ষা করে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচান।’’
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে প্রথম বার রাজ্য সফরে এসেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। রাজ্য সরকার এ দিন তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়। সংবর্ধনা প্রদানের পরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে যে ভাবে ‘বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা’ করার কথা বলেছেন, পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিরোধীরা এখন কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসা ও বঞ্চনা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত’ ইত্যাদি অভিযোগে সরব। সেই পরিস্থিতিতে মুর্মুকে ‘গোল্ডেন লেডি’ বলে সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ পদ, যিনি সংবিধান রক্ষা করতে পারেন।’’
বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি মুর্মুও এ রাজ্যের সামাজিক ন্যায় ও আত্মসম্মান রক্ষায় বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরায় বিষয়টি পর্যবেক্ষকদের নজরে এসেছে। সংবর্ধনার উত্তরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘বাংলা সামাজিক ন্যায় এবং আত্মসম্মানকে প্রাধান্য দেয়। সকলকে সম্মান দেওয়া, সব সংস্কৃতিকে আপন করে নেওয়া বড় ব্যাপার।’’ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী শিল্পীদের সঙ্গে যে ভাবে নাচ-গান করেছেন, তারও প্রশংসা করেছেন রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে, সিধু-কানহুর নামাঙ্কিত রাস্তার কথা জেনে তিনি যে আনন্দিত, এ দিন তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। দিল্লিতে গিয়ে আগেই রাষ্ট্রপতিকে রাজ্যে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন মমতা। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে রাজ্যে আসেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আরও একটি দিক থেকে এ দিনের অনুষ্ঠান তাৎপর্যপূর্ণ। একটা সময়ে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে শাসকদলের এক মন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তার বিরোধিতা করে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন মমতা নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার সময়েই রাষ্ট্রপতিকে ‘গোল্ডেন লেডি’ বলে সম্বোধন করেন। বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে আমরা ধন্য ও গর্বিত। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সব রাজনৈতিক দল, সমাজের সর্বক্ষেত্রের মানুষ, বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ যদিও বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এ দিন পিছু ছাড়েনি।
রাষ্ট্রপতি বক্তৃতায় বাংলার ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। রবীন্দ্রনাথ থেকে রাজা রামমোহন, শ্রীরামকৃষ্ণ-চৈতন্য থেকে স্বামী বিবেকানন্দ—সকলের কথা তুলে ধরেন তিনি। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে উল্লেখ করেন উত্তম কুমার, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ গৌরব বাড়াচ্ছেন।... সকলকে প্রণাম।’’
অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে এ রাজ্যের উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেবী এবং নারীশক্তির মেলবন্ধনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এ দিন অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ডোকরার দুর্গামূর্তি, উত্তরীয়, দু’টি বালুচরি শাড়ি, বিশ্ব বাংলার লোগো সম্বলিত স্মারক ইত্যাদি রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজভবনে ঘরে ডেকে তাঁর হাতে রাষ্ট্রপতি মুর্মু তুলে দেন শাড়ি, উত্তরীয়, মিষ্টি, রাষ্ট্রপতি ভবনের ছোট মডেল ইত্যাদি। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে রংচঙে শাড়ি রাষ্ট্রপতি তাঁকে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে কোনও আদিবাসী অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময়ে তা পরতে চান তিনি। শিল্প ও সাংস্কৃতিক মহল, খেলা, কলকাতা পুরসভা, বিধানসভার পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ দিন নেতাজি ভবনেও গিয়েছিলেন তিনি।