প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি পিটিআই।
তিন বছর আগে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছিল—রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ থেকে বদলে ‘বাংলা’ করা হোক। কিন্তু মোদী সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি তুললেন, এ বার রাজ্যের নাম বদলে কেন্দ্র সায় দিক। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যের নাম বদল নিয়ে চর্চা হয়েছে। বলেছি, অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। এ বার মেহেরবানি করে ওটা করে দিন।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের অনেক বিষয়ে চাপানউতোর চলছে। পুনরায় রাজ্যের নাম বদলের দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রী সেই চাপানউতোরে নতুন মাত্রা যোগ করলেন।
সূত্রের খবর, রাজ্যের নাম বদল ছাড়া বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব তৈরির প্রসঙ্গও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধান পরিষদ গঠিত হলে অমিত মিত্রকে অর্থমন্ত্রীর পদে রেখে ভোটে জিতিয়ে বিধানসভায় আনার ক্ষেত্রে সমস্যা মিটে যায়। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী মমতাকে বলেন, অনেক রাজ্য বিধান পরিষদ তুলেও দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেকেও উপনির্বাচনে জিতে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর উপনির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি বলে মমতার দাবি। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চাই রাজ্যগুলির উপনির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হোক। এখন বাংলার কোভিড পরিস্থিতি ভাল। তৃতীয় ঢেউ এলে নির্বাচন করানো যাবে না।’’
ঠিক তিন বছর আগে, ২০১৮-র ২৬ জুলাই বঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতিতে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়। ২০১৯-এর জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংসদে প্রশ্নের উত্তরে জানায়, ‘রাজ্যের নাম বদল করতে হলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। এখনও সংবিধান সংশোধনের কোনও প্রস্তাব নেই।’ কেন্দ্রীয় সূত্রের বক্তব্য ছিল, রাজ্যের নাম বদলের প্রক্রিয়া শুরুর আগে রেজিস্ট্রার জেনারেল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, রেল মন্ত্রক, ডাক বিভাগ, সার্ভে অব ইন্ডিয়া, বিদেশ মন্ত্রকের থেকে জানতে হয়, কারও আপত্তি রয়েছে কি না। বিদেশ মন্ত্রক জানায়, পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হলে, বাংলাদেশের সঙ্গে নামের মিল তৈরি হবে। তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। এ বার ফের সরাসরি তিনি সেই দাবি তুললেন। প্রধান যুক্তি, বাংলা ভাষায় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’কে পশ্চিমবঙ্গ বলা হলেও সংবিধানের প্রথম তফসিলে রাজ্যের নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ই রয়েছে। সর্বভারতীয় স্তরে সব রাজ্যকে নিয়ে কোনও বৈঠক হলে বর্ণানুক্রমে এ রাজ্যের ডাক পড়ে শেষের দিকে। মুখ্যমন্ত্রী কী বলছেন, শোনার ধৈর্য বিশেষ থাকে না কারও।
বাম জমানায় ১৯৯৯ সালে প্রস্তাব এসেছিল ‘ক্যালকাটা’কে ‘কলকাতা’ এবং পশ্চিমবঙ্গকে ‘বাংলা’ করার। প্রথমটা হলেও পরেরটা হয়নি। মমতার সরকার রাজ্যের নাম সব ভাষাতেই ‘পশ্চিমবঙ্গ’ করার জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের সাড়া মেলেনি। ২০১৬-য় বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি— তিন ভাষায় ‘বাংলা’, ‘বঙ্গাল’ ও ‘বেঙ্গল’ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলে, একটিই নাম হোক। সংবিধানে একটি রাজ্যের নাম একটিই থাকে। ‘বাংলা’র নাম ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ হলে, উত্তরপ্রদেশকে ইংরেজিতে ‘নর্থ প্রদেশ’ বলতে হয়। তার পরেই ২০১৮-য় সব ভাষাতেই ‘বাংলা’ নামের প্রস্তাব বঙ্গ বিধানসভায় গৃহীত হয়।