পথেই জীবন: জল নামলেও বাড়ি বাসের অযোগ্য। দিন কুড়ি হল খড়্গপুর-ময়না রাজ্য সড়কের ধারে এই ঝুপড়িতেই রয়েছেন বহু বন্যা-দুর্গত। ছবি: কিংশুক আইচ
বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ার কারণে রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাই আগেই রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-কে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও এক ধাপ এগিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, কেন্দ্র স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করলে রাজ্য ধারাবাহিক বন্যা সমস্যার থেকে পরিত্রাণ পাবে না। গত ৪ অগস্ট জলাধারগুলির সংস্কারের দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার অভিযোগ, সেই চিঠির উত্তর এখনও পায়নি রাজ্য। বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মমতার দাবি, আর দেরি না করে দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত কেন্দ্রের।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ডিভিসি-র মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার কারণে অনেকগুলি জেলা কার্যত ভেসে গিয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগ। তাতে ২৮ সেপ্টেম্বর ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল। চার দিনের সময় পেয়েও অজানা কারণে অল্প করে জল না ছেড়ে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ একর-ফুট জল ছাড়ে ডিভিসি। তাতে এই উৎসবের মরসুমে নিম্ন দামোদর অববাহিকা এলাকায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
মোদীকে মমতা জানিয়েছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় পাঞ্চেত এবং মাইথন জলাধার থেকে ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। দুপুর ১টায় তা বেড়ে হয় ১ লক্ষ কিউসেক। রাত সাড়ে আটটায় ১.২৫ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়। ওই দিনই ঝাড়খণ্ডের শিকাতিয়া জলাধার থেকে ভোর তিনটের সময় ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। পৌনে ১০টা নাগাদ ছাড়া হয় ১.২০ লক্ষ কিউসেক জল। ১ অক্টোবর সকাল সওয়া আটটা থেকে দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ে ডিভিসি। বিকেলে তা কমে হয় ১.২৫ লক্ষ কিউসেক। ২ অক্টোবর সকাল ১০টায় ৯৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। আবার ওই দিন বেলা ১১টার সময় ছাড়া হয় ৯৫ হাজার কিউসেক জল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘তিন-চার মাসের ব্যবধানে দু’বার এই ঘটনা ঘটেছে। ফলে লক্ষাধিক মানুষ
দুর্ভোগে পড়েছেন। সম্পত্তি এবং জীবনহানীও হয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, ‘‘নিয়ন্ত্রিত উপায়ে জল ছাড়তে এবং জলাধারগুলির ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে পদক্ষেপের বিষয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে ডিভিসি। তাতে বাংলা প্রতি বছর বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।’’ প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একত্রে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে চায় পশ্চিমবঙ্গ।