Mamata Banerjee

ঝাড়গ্রামে কুড়মিতে চুপ মুখ্যমন্ত্রী, ক্ষোভ

গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার তিনটি আসনে তৃণমূলের পরাজয়ের কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল জনজাতি ও কুড়মি ভোটের ভাগাভাগি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ০৭:১৮
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

গত দু’দিনে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার সভায় আদিবাসী-জনজাতি ও কুড়মিদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের সভায় কুড়মি প্রসঙ্গে একেবারেই চুপ থাকলেন তিনি। শোনা গেল না কুড়মিদের নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাবিত সমীক্ষার কথাও। অথচ আদিবাসীদের প্রসঙ্গ ফিরে ফিরে এল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।

Advertisement

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি সভায় ডাক পেয়েছিল বিভিন্ন জনজাতি সামাজিক সংগঠন। সাঁওতাল, মুন্ডা ও ভূমিজ সামাজিক সংগঠনের ছ’জন প্রতিনিধি মঞ্চে দ্বিতীয় সারিতে বসেছিলেন। তবে কুড়মি সামাজিক সংগঠনের কেউ আমন্ত্রণ পাননি। শুধু সরকারি কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারপার্সন রথীন্দ্রনাথ মাহাতো এবং প্রাক্তন মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো ছিলেন মঞ্চের নীচে সংরক্ষিত অতিথি আসনে। রথীন্দ্রনাথ বলেন, “কেন কুড়মি সংগঠনগুলিকে ডাকা হয়নি, আমার জানা নেই।” আর চূড়ামণি বলছেন, “এটা প্রশাসনিক বিষয়। যেখানে আসন দিয়েছে, বসেছি।”

গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার তিনটি আসনে তৃণমূলের পরাজয়ের কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল জনজাতি ও কুড়মি ভোটের ভাগাভাগি। তারপর গত পঞ্চায়েতে জাতিসত্তার দাবিকে সামনে রেখে জঙ্গলমহলে কুড়মি প্রার্থীরা নির্দল হিসেবে লড়ে কিছু আসনে জেতেনও। ঝাড়গ্রামে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচিতে অশান্তির প্রেক্ষিতে সেই সময় কুড়মি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারিতে পারদ চড়েছিল।

Advertisement

ফলে, লোকসভা ভোটের আগে আদিবাসী-কুড়মি বিরোধ মেটাতে তৎপর মুখ্যমন্ত্রী। গত সপ্তাহে নবান্নে দুই শিবিরের একাধিক সংগঠনের নেতৃত্বকে ডেকে বৈঠক করেছেন তিনি। তাঁদের দাবিদাওয়া শুনেছেন। তারপর মঙ্গলবার পুরুলিয়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোট এলে আদিবাসী ও মাহাতোদের (কুড়মি) মধ্যে ঝগড়া লাগাবেন না। কারণ অনেক মাহাতোও আদিবাসী আছেন।”

কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির বিরোধিতা করছে বিভিন্ন জনজাতি সংগঠন। ফলে, ঝাড়গ্রামে এসে কুড়মি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নীরব থাকা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘অনেক মাহাতোও আদিবাসী’, মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনে চর্চা শুরু হয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে মাত্র ১১ হাজার ভোটে তৃণমূল হেরেছিল। সেখানেও শাসক দলের অন্তর্তদন্তে জনজাতি ভোট ভাগাভাগির কথা উঠে এসেছিল।

তবে কি আদিবাসী-জনজাতিকে গুরুত্ব দিতেই এ দিন কুড়মি প্রশ্নে চুপ রইলেন মুখ্যমন্ত্রী? ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর দাবি, “এ দিন কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের ‘কুড়মি ভবন’ মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। কুড়মিরা সভাতেও ছিলেন।” যদিও আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতোর ক্ষোভ, “মুখ্যমন্ত্রী ভোটের মেরিট লিস্ট দেখে সরকারি সভা করছেন। ঝাড়গ্রামে বহু কুড়মি আছেন। কুড়মি সংগঠনগুলিকেও ডাকা উচিত ছিল।” কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) মুখপাত্র কৌশিক মাহাতো জানালেন, “আমন্ত্রণ পাইনি।” আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের মহামোড়ল অনুপ মাহাতো বলেন, “আমরাও ডাক পাইনি। বিষয়টি লক্ষ করেছি।”

মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথীর কটাক্ষ, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে উনি ধর্ম ও সমাজকে ব্যবহার করেন। হয়তো রাজনীতির কারণে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের ডাকেননি এখানেও।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement