‘জাগ্রত বাংলা’ কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর রুখতে সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাজ্যের পুলিশবাহিনীকে সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদাহরণ হিসেবে টেনে আনলেন দিল্লিতে কৃষক-বিক্ষোভের প্রসঙ্গও।
এ দিন ‘জাগ্রত বাংলা’ কর্মসূচিতে আত্মসমর্পণকারী ৪১১ জন মাওবাদী এবং কামতাপুরী লিবারেশন অর্গানাইজেশনের ৫৯৭ জন প্রাক্তন সদস্যকে স্পেশাল হোমগার্ড-পদে নিয়োগপত্র দেন মমতা। মাওবাদী বা কেএলও-র সশস্ত্র হামলায় আক্রান্ত ৩৬টি পরিবারের সদস্যদেরও এ দিন নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে সরকারি নিয়োগপত্র পেলেন ১৫৪৩ জন। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা আমাদের রাজ্যের সম্পদ। সৈনিকের মতো আমাদের সঙ্গে থেকে লড়াই করতে হবে। কেউ দাঙ্গা, মারপিট করলে বা কুৎসা রটালে রুখে দাঁড়াতে হবে আপনাদেরই। ফেক (ভুয়ো) খবর, ফেক ভিডিয়ো দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়। দেখলেন না, কৃষকদের বলে দিল টেররিস্ট (উগ্রবাদী)! ৫০ লক্ষ ফেক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছে। যা ইচ্ছা বলছে। মিথ্যাকেও ভাইরাল করতে পারে।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ। এক দিকে জঙ্গলমহল এবং পাহাড়ে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে নাম না-করেও বিজেপিকে নিশানায় রাখতে চাইছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র জানান, ২০১১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মাওবাদী এলাকায় ২৫ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ৫৫০০ জুনিয়র কনস্টেবল নেওয়া হয়েছে। গোটা রাজ্যে নিয়োগ হয়েছে ৩৫ হাজার। বীরেন্দ্রের বক্তব্য, কেন্দ্র মাওবাদীদের হাতে আক্রান্তদের শুধু আর্থিক সহায়তা দেয়। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই আক্রান্ত পরিবারগুলির সদস্যদের চাকরি দিয়েছে। মমতার বক্তব্য, “মাওবাদী বা কেএলও-র নাশকতায় যাঁরা মারা গিয়েছেন বা নিরুদ্দেশ হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিবারের এক জনকে স্পেশাল হোমগার্ডের পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। তাঁদের সংখ্যা ৫৩০। জঙ্গলমহল কাপের উইনার এবং রানারদের সিভিক ভলান্টিয়ার করছি আমরা। হোমগার্ডেরাও প্রোমোশন পাবেন। ১০ শতাংশ কোটা আছে, সিভিক থেকে হোমগার্ডে যাবে।”
পুলিশবাহিনীর একাংশের উষ্মা গত বছর প্রকাশ্যে এসেছিল একাধিক বার। তা মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। পুলিশকর্মীদের অতিরিক্ত কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “বাংলা এবং কলকাতার পুলিশ দক্ষতায় সেরা বললে ভুল করব না। ১৬ হাজার পুলিশকর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। ৭৫-৮০ জন মারাও গিয়েছেন। আমাদের মতো মানবিক পুলিশ গোটা ভারতে নেই। অবসাদে অনেকে আত্মহত্যা করেন। জীবন থাকলেই সমস্যা থাকবে। আত্মহত্যা সমাধান নয়। মন খারাপ হলে ঘুরবেন, গান শুনবেন, বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করবেন। ভুল করে, ফ্যাসাদে পড়ে ভাবছেন সুইসাইড করলেই সমস্যা মিটবে। ভুল। আপনার ঊর্ধ্বতনকে সমস্যাটা জানান। আইনের সুরক্ষা আছে আপনার জন্য।”
সরকারের ঘোষণা, আগামী তিন বছরে ২৪ হাজার কনস্টেবল এবং ২৪০০ সাব-ইনস্পেক্টর নিয়োগ করা হবে। ১০ শতাংশ কোটা থাকবে পদোন্নতিতে। ৫২ দিনের জায়গায় ৬০ দিনের ‘লিভ কম্পেনসেশন পে’ মিলবে। পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্ট পলিসিতে মৃত্যু বা স্থায়ী ভাবে পঙ্গু হলে এখন পুলিশকর্মীরা ছ’লক্ষ টাকা এবং পুলিশ সহকর্মীরা পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুযোগ পান। এটা বাড়িয়ে যথাক্রমে ১০ এবং সাড়ে সাত লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব আছে।