গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এই সেদিনও তাঁরা ছিলেন প্রবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। বুধবার তাঁদেরই জন্য বিস্ময়মাখা সহানুভূতি শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। মোদী মন্ত্রিসভায় রদবদলের আগেই বাংলা থেকে দুই মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরী ইস্তফা দিয়েছেন শুনেই মমতা বলেছেন, ‘‘বাবুল-দেবশ্রী বিজেপির কী ক্ষতি করল?’’ অনেকে মনে করছেন দুই পদত্যাগী মন্ত্রীকে বিশুদ্ধ খোঁচা। আবার অনেকের মতে, এ হল কৌশলে বাবুল-দেবশ্রীর থেকে বিজেপি-র দূরত্ব রচনার চেষ্টা।
তবে বাবুল-দেবশ্রীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের পদত্যাগ নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোঁচা দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, করোনা সামলানোয় ব্যর্থতা ঢাকতে হর্ষ বর্ধনকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে।
বুধবার বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের ফাঁকে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছেন, ‘‘বাবুল-দেবশ্রী কী ক্ষতি করল? হঠাৎ ওরা বিজেপি-র কাছে কী ভাবে খারাপ হয়ে গেল?’’ আর হর্ষ বর্ধনের পদত্যাগের প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আপনারা কি মনে করেন, ওরা প্রশাসন নিয়ে চিন্তিত? সব বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। যদি ওরা সত্যিই চিন্তিত হতেন, তা হলে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ ঠেকানো যেত।’’
বাবুলের সঙ্গে মমতার সম্পর্কের রসায়ন ‘অম্লমধুর’। ২০১৫ সালে নজরুল মঞ্চের একটি অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে তৎকালীন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুলকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তার পর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে গাড়ি থামিয়ে বাবুলকে ঝালমুড়ি খাইয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনা নিয়ে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য রাজ্য বিজেপি নেতার সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল বাবুলকে। আরও একবার নেদারল্যান্ডস সফরে যাওয়ার পথে দমদম বিমানবন্দরের একটি রেস্তরাঁয় বাবুলকে চা-কুকিজ খাওয়ান মমতা।
তবে এর সম্পূর্ণ বিপরীত ছবিও দেখা গিয়েছে। মমতাকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন বাবুল। বাবুলের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন মমতা। নেতাজি জয়ন্তীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের চত্বরে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনে মমতা ক্রুদ্ধ হওয়ার পরেও কড়া কটাক্ষ করেছিলেন বাবুল। নেটমাধ্যমে ‘টিএমসি’ (তৃণমূল)-কে নিয়মিত ‘টিএমছিঃ’ বলেও কটাক্ষ করতেন বাবুল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তা লিখতে দেখা যায়নি বাবুলকে। এমনিতে নেটমাধ্যমে যথেষ্ট সপ্রতিভ এবং নিয়মিত থাকলেও বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পর খানিকটা চুপচাপই ছিলেন বাবুল। তবে ফুটবল অন্তপ্রাণ এই গায়ক ইউরো কাপ এবং কোপা আমেরিকা নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করতেন। মাঝে একবার বিধানসভা ভোটের বিপর্যয় নিয়েও নেটাগরিকদের একাংশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।