(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-এর বিরোধিতা করতে গিয়ে এ বারে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে ‘সাক্ষী’ মানলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শিলিগুড়িতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেখছিলাম অসমের মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্তবিশ্ব শর্মা) বলছেন, সিএএ-তে কোনও লাভ হবে না।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘নির্বাচনের আগে, এটা একটা ললিপপ। মানুষের মধ্যে বৈষম্য হয়। তা মানব না। সবাইকে নিয়ে চলাটাই মানি।’’ একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘মনে রাখবেন সিএএ-র সঙ্গে এনআরসি জুড়েছে।’’
এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘সিএএ, এনআরসি আমরা মানব না। যেই আবেদন করবেন, ভোট তো দিতে পারবেনই না। যতই বলুক অধিকার কাড়া হবে না, সেটা লেখা নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যত দিন আমি থাকব, মা-মাটি-মানুষ থাকবে, আপনাকে যদি মনে করে দেশ থেকে বিদায় করবে, কারও ক্ষমতা নেই। গায়ে রক্ত থাকতে তা করতে দেব না।’’
সোমবার সিএএ জারি করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার পর থেকেই ওই আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে বিরোধী দলগুলি। শুধু মমতা নন, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, অনেকেই এই আইনের বিরোধিতা করেছেন। কেজরীওয়ালের অভিযোগ, এর ফলে পড়শি দেশ থেকে কোটিরও বেশি শরণার্থী ভারতে আসতে পারেন। তাঁরা এ দেশের মানুষের কাজ ছিনিয়ে নিতে পারেন।
এ দিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ পাল্টা বলেন, ‘‘মমতা আসলে নিজের সংখ্যালঘু ভোট-ব্যাঙ্ক বাঁচাতেই পথে নামতে চাইছেন।’’ সিএএ নিয়ে অযথা আপত্তি তোলা হচ্ছে এবং তাঁদের (বিজেপি) বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরি। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বার বার জানিয়েছেন, ওই আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না। বরং, নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিজেপির অভিযোগ, মুসলিম সমাজকে নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার মিথ্যা ভয় দেখিয়ে নিজেকে মুসলিমদের ‘উদ্ধারকর্তা’ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন মমতা। অথচ, এই বিলের সঙ্গে মুসলিমদের সরাসরি সম্পর্ক নেই। মমতা সিএএ-র বিরোধিতা করায় সরব হয়েছেন কেন্দ্রের মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই হিন্দু-বিরোধী। রাজনীতি করতে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।’’
যদিও হিন্দুত্বের প্রশ্নে বিজেপিকে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘বিজেপি হিন্দু, হিন্দু বলে। এই হিন্দুর তকমা আলাদা। এ আমাদের দুর্গাপুজোর হিন্দু নয়। রামকৃষ্ণের হিন্দু নয়। স্বামী বিবেকাননন্দ, বীরসা মুন্ডা, পঞ্চানন বর্মার হিন্দু নয়। নতুন করে একটা হিন্দু ধর্ম আমদানি করেছে, যেটা হিন্দু ধর্মকে অপমানিত করেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা বর্ণ বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। সর্ব ধর্ম সমন্বয়, সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই। এটা মানবিক পরিবার।’’
মমতাকে ‘জবাব দিতে’ মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ-র সঙ্গে এনআরসির যোগ নেই। অসমে এনআরসি হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। মতুয়া, উদ্বাস্তু এবং শরণার্থী পরিবারের সমস্ত মানুষকে বলব, তৃণমূলকে একটি ভোটও যেন কেউ না দেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘রোজার সঙ্গে সিএএ বিধি জারি করার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির চাপান-উতোর সম্পর্কে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের সাংসদেরা নাগরিক অধিকার আইনের বিরুদ্ধে কটা ভোট দিয়েছেন, তা দেখতে হবে। ভোট দেননি কেন, জানতে হবে। পক্ষে-বিপক্ষে বলে মানুষের মধ্যে ভয় ধরানোর চেষ্টা। তার পরে ভরসা দেওয়া হবে। ভোট চাওয়া হবে। এই তো চলছে।’’
সিএএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এসইউসি(সি)-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষও।