শিল্পের প্রসারে শান্তির বার্তা

মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের ক্রমশ প্রসার ঘটছে। নতুন নতুন শিল্প হচ্ছে। হলদিয়ায় শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’’

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

দিঘা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩২
Share:

প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার দিঘায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

জেলায় রয়েছে বন্দর ও শিল্পশহর হলদিয়া। হলদিয়া রাজ্যের শিল্পায়নের ‘মুখ’ও বটে। সেই জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এসে তাই শিল্পাঞ্চলের শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যে হলদিয়া এবিজি বিদায় পর্বের সাক্ষী, যেখানে বিভিন্ন শিল্পসংস্থায় শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযোগ ওঠে, সেই জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের ক্রমশ প্রসার ঘটছে। নতুন নতুন শিল্প হচ্ছে। হলদিয়ায় শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোলাঘাট থেকে হলদিয়া, যদি কর্মসংস্থান তৈরি করতে হয়, তাহলে পুরো এলাকাকে শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। বিষয়টা পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে হবে।’’

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের স্বার্থে গোটা জেলার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজ্য সরকার যে কতটা আন্তরিক দিঘায় মঙ্গলবারের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা তা জানতে চান উপস্থিত শিল্পসংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে। প্রত্যেকেই জানান, তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। প্রশাসনের তরফে সাহায্য পাচ্ছেন। একটি ব্যাঙ্কিং সংস্থার কর্তার সংযোজন, ‘‘হলদিয়ার শিল্পাঞ্চলের পরিকাঠামো-সহ অন্য সুবিধা থাকায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আরও বিনিয়োগ করতে চাই।’’
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার হল কলকাতা থেকে খড়্গপুরগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক পথে কোলাঘাট এলাকার হলদিয়া মোড় থেকে হলদিয়াগামী ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রায় ৫২ কিলোমিটার ওই সড়কপথ জেলার উত্তরপ্রাপ্ত কোলাঘাট থেকে দক্ষিণপ্রান্ত হলদিয়াশিল্পাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। ওই জাতীয় সড়ক দিয়ে শিল্পাঞ্চলের পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়াও শিল্পসংস্থার কর্তারা যাতায়াত করে থাকেন। আবার কোলাঘাটে রয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সিমেন্ট কারখানার মতো ভারী শিল্প। ওই দুই শিল্পাঞ্চলের স্বার্থে সড়কপথ সুরক্ষিত করা ছাড়াও যে পুরো এলাকায় শান্তি রক্ষা করা প্রয়োজন তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পমহল ও প্রশাসনের একাংশই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সম্প্রতি হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক-কর্মীদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য কারখানার প্রবেশ পথ আটকে শ্রমিকদের বিক্ষোভের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনই পুরোভাগে ছিল বলে অভিযোগ। ফলে, পুলিশ-প্রশাসনও নাকি সক্রিয় হয়নি। এমন সব ঘটনায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের ভাবমূর্তি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী বাড়তি সতর্ক বলেই ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।

শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে দিঘা নিয়েও পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। দিঘায় হোটেল শিল্প প্রসারের মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দিঘায় নতুন ৬০টি হোটেল হচ্ছে। এতে অনেক কর্মসংস্থান হবে। এখন ছুটির দিন ছাড়াও কাজের দিনে পর্যটকেরা দিঘায় আসছেন। দিঘায় হোটেল শিল্পের প্রসার ঘটছে।’’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘চণ্ডীপুর থেকে দিঘা রাস্তায় কোনও রকম বাধা চলবে না। আমি আইসি, ডিএম, এসডিওকে বলছি দিঘার উপকূলে কোনও বেআইনি নির্মাণ চলবে না। যদি কেউ বাধা দেয় কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সমুদ্রের ধারে পর্যটকেরা আসেন। তাঁরা এলে লক্ষ্মীলাভ হয়। কিন্তু সমুদ্রের ধারে যদি বসার জায়গা না থাকে তবে পর্যটকরা আসবেন কেন। সমুদ্র পাড় বরাবর ৭ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ বানানো হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। অনেক কষ্ট করে বাংলাকে এই জায়গায় দাঁড় করানো হয়েছে। বাংলা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাকে রক্ষা করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement