মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক বা সরকারি সভার জন্য খরচ কমতে চলেছে বলে প্রশাসনের অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা। কারণ, সূত্রের দাবি, সরকারি খরচের ‘বাহুল্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। প্রসঙ্গত, এমন সভা-বৈঠকের খরচ নিয়ে হামেশাই কটাক্ষ করে থাকেন বিরোধীরা।
পাশাপাশি, সূত্রের অনুমান, কর্তব্যে গাফিলতিতে সম্প্রতি যে ভাবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা, তাতে আগামী দিনে পরিষেবায় ঘাটতি বা কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে জরিমানাও দিতে হতে পারে।
আধিকারিক মহলের দাবি, বুধবার জেলা-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অফিসারদের আচরণের পাশাপাশি খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। জেলা-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোনও প্রশাসনিক বৈঠক বা সরকারি সভার আয়োজনে কেন কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তোলেন খাবার-খরচের বাহুল্যের প্রসঙ্গও। আধিকারিকদের মতে, সভা বা বৈঠকের জন্য বার বার পরিকাঠামো তৈরির বদলে পূর্ত দফতরই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে রাখতে পারে। শুধুমাত্র শ্রমিক নিয়োগ করে সেই সরঞ্জাম ব্যবহার করে পরিকাঠামো তৈরি করা যায়।
এক কর্তার কথায়, “কিছু জেলায় আগের কয়েকটি প্রশাসনিক বৈঠক-বাবদ কয়েক কোটি করে অর্থ বকেয়া রয়েছে। তা ঠিকাদারদের মেটানোর কথা। সেই তথ্য জেনেই মুখ্যমন্ত্রী অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধের ব্যাপারে প্রত্যেককে সতর্ক করেছেন। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, একটা চেয়ার-টেবিলেই তিনি কাজ করে ফেলতে সক্ষম। ফলে এত বাহুল্যের প্রয়োজন নেই।”
প্রসঙ্গত, অতীতে একাধিক বার এমন প্রশাসনিক বৈঠকগুলির খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে এই খরচ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ছিল তাঁদের।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দুর্নীতি প্রশ্নে ‘চোর স্লোগান’ তুলে শাসক পক্ষকে বিরোধীরা কোণঠাসা করতে চাইছে। সেই আবহে বুধবারের ওই বৈঠকে আধিকারিকদের আচরণ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক-দু’জনের অনিয়ম-দুর্নীতির দায়িত্ব গোটা সরকার নেবে না বলে জানিয়ে দিলেও, নিয়ম মেনে কাজে সতর্ক নজর রাখার পরামর্শ বৈঠকেই দিয়েছিলেন তিনি। কাজে গাফিলতি বা পরিষেবা দানে বাধার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে আইনত কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন মমতা। তাই আধিকারিকদের অনেকে মনে করছেন, তেমন ঘটনায় আগামী দিনে বেতন থেকে জরিমানার অর্থও কেটে নিতে পারে সরকার। যদিও চলতি আইনে রাজ্য এই পদক্ষেপ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রবীণ আমলাদের অনেকের মধ্যে।