কল্যাণী এমস। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সোমবার কল্যাণী এমসে জয়নগরে নির্যাতিতা শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মোমিনপুরের কাটাপুকুর মর্গ থেকে সোমবার সকালেই দেহ নিয়ে গাড়ি রওনা দেয় কল্যাণীর উদ্দেশে। পৌনে ১০টা নাগাদ সেই গাড়ি কল্যাণীতে পৌঁছয়। হাই কোর্ট নির্দেশে এমসের কথা বললেও নাবালিকার দেহ ময়নাতদন্ত করা হয় কল্যাণী জেএনএমে। তবে ময়নাতদন্ত করেন এমসের চিকিৎসকেরাই। সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি জলাভূমি থেকে উদ্ধার হয় ওই নাবালিকার দেহ। ন’বছরের শিশুকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। তার পর শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিবার ও গ্রামবাসীদের দাবি, নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রথমে পুলিশের ভূমিকা সদর্থক ছিল না। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার মোমিনপুরের কাটাপুকুর মর্গে নাবালিকার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছিল পুলিশ। সেখানে বিক্ষোভ দেখান সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে বিজেপিও মর্গের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে স্লোগান দেন সিপিএমের দীপ্সিতা ধরেরা। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় তাঁদের। ওই গোলমালের জেরে শেষমেশ মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত হয়নি শনিবার।
রবিবার জরুরি শুনানিতে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ-প্রশাসন। জয়নগরকাণ্ডে কেন পকসো আইনে মামলা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, মেয়েটির বয়স ১০ বছরের কম হওয়া সত্ত্বেও কেন পকসো আইনে মামলা রুজু করেনি পুলিশ? সুরতহালের পরেও কেন পুলিশ পকসো ধারায় মামলা রুজু করল না? এর পরেই জয়নগরকাণ্ডে পুলিশকে পকসো আইনের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ যদি প্রথমেই তৎপর হত, তা হলে নাবালিকার এই পরিণতি হত না। পুলিশ অবশ্য সেই অভিযোগ মানেনি। এক যুবককে গ্রেফতারও করেছে তারা। জয়নগরের ওই এলাকা এখনও থমথমে। এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তার মাঝেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা চলছে। স্থানীয় বাজারে সোমবার সকালে অনেক দোকানপাটই খুলে গিয়েছে। কেনাবেচাও চলছে ধীর লয়ে। তবে রাস্তায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংখ্যক পুলিশ ঘোরাফেরা করছে। দফায় দফায় টহল দিচ্ছে পুলিশের গাড়ি। এলাকায় রয়েছে পুলিশি পিকেট।