মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যে। ফাইল চিত্র।
তাঁরই বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই অবস্থিত ইকো পার্কে বুধবার আয়োজিত সরকারি বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে ডাক না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। এ বার সে বিষয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, তাপসের মুখ খোলাকে ‘দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী’ বলেই মনে করছেন দলনেত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ওই সূত্রের দাবি, সর্বসমক্ষে কিছু না বললেও যে ভাবে তাপস প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন, তা নিয়ে বিরক্ত তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘বুধবার ইকো পার্কের বিজয়া সম্মিলনীতে রাজ্যের অনেক মন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু তাঁরা তো এ ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন না! যদি ক্ষোভ থাকে, সেটা দলের মধ্যে বলা যায়। এ ভাবে প্রকাশ্যে কথা বলাটা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী।’’ তবে ওই নেতার আশা, বিষয়টি দলের মধ্যে কথা বলেই মিটিয়ে নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পেয়ে তাপস প্রশ্ন তুলেছিলেন, নিউটাউনে কোনও অনুষ্ঠান হলে তিনি কেন ব্রাত্য হয়ে যান? তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা গত বছরও হয়েছিল। তখন শিল্পমন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু কোনও সদর্থক উত্তর পাইনি।’’ তার পরেই আক্ষেপ করে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে আসা তাপস বলেছিলেন, ‘‘আমার কাজ বা স্টেটাস বোধহয় এই ধরনের গ্রোগ্রামে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। দলে বাবু ও চাকরের মধ্যে আমরা বোধহয় সেকেন্ডটার (দ্বিতীয়) মধ্যে পড়ি।’’ এই প্রসঙ্গেই নাম না করে ঘুরিয়ে তিনি কটাক্ষ করেছিলেন বিধাননগর পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকেও। ঘটনাচক্রে, তাপস আমন্ত্রণ না পেলেও সব্যসাচী মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মিলনীতে আমন্ত্রিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে অবশ্য সব্যসাচীর দাবি ছিল, ‘‘বুধবারের অনুষ্ঠানটা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। আর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। এর বেশি এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’
সেই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, তাপস যে গত বছরও বিজয়া সম্মিলনীতে ডাক পাননি সে কথা তিনি তখনই প্রকাশ্যে জানাননি কেন? বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন দল খানিক ‘বিড়ম্বনায়’ তখন তাপস কেন এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন? বস্তুত, তাপসের সময় নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এরই মধ্যে দলনেত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে।
অন্যদিকে, ‘রায়’ তাপস নিয়ে খোলাখুলি উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা মমতার ‘আস্থাভাজন’ ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বক্তব্য, তাপসের যা বক্তব্য, তা দলের অন্দরে বলা উচিত ছিল। প্রসঙ্গত, দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় এবং বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র আবার ওই প্রশ্নে তাপসের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। ঘটনাচক্রে, বরাহনগরের বিধায়ক তাপস টানা দলের প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘শব্দ ব্রহ্ম’ প্রয়োগ করে চলেছেন।