সরকারি কর্মীদের কাজে মন নেই, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যসচিব দু’টি পর্যায়ে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় রাশ টানতে চান। সচিবালয় স্তরে দফতরগুলির কাজকর্ম সচিবদের আরও কঠোর ভাবে তদারক করতে বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে বলেছেন জেলাশাসক, বিডিও-দের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

নবান্নে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার।—ছবি পিটিআই।

বরাদ্দ বিপুল। খরচও হচ্ছে। কিন্তু সরকারের ভাল কাজের প্রভাব জনমানসে কতটা পড়ছে, প্রশাসনের উপর তলা সেই বিষয়ে সন্দিহান। এতটাই যে, বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। এক শ্রেণির অফিসারের কাজে অবহেলা, বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব যে সরকারের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন এটা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেন মুখ্যসচিবকে।

Advertisement

তার পরেই বৈঠকে এক গুচ্ছ দাওয়াই বাতলে দেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। যার মোদ্দা কথা হল: লাল ফিতের ফাঁস খুলে প্রশাসনকে আরও গতিশীল করতে হবে এবং সরকার যে-কাজ করছে, তার প্রভাব যাচাই করতে হবে আমজনতার মধ্যে।

মুখ্যসচিব দু’টি পর্যায়ে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় রাশ টানতে চান। সচিবালয় স্তরে দফতরগুলির কাজকর্ম সচিবদের আরও কঠোর ভাবে তদারক করতে বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে বলেছেন জেলাশাসক, বিডিও-দের। ডিএম-রা বছরে দু’বার ব্লক স্তরে বৈঠক করবেন এবং তার আগে আমজনতার মুখোমুখি বসে শুনে নেবেন তাদের অভাব-অভিযোগ। ব্লক স্তরের বৈঠকে তিনি তা জানানোর পরে বিডিও-রা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গিয়ে সমস্যার সুরাহা করবেন। ব্লক স্তরে অন্য অফিসারদের এক-এক জনকে এক-একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নোডাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে জনসংযোগে এ ভাবেই প্রশাসনকে হাতিয়ার করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ডিএম, বিডিও-দের মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে সমস্যা মেটানো যাবে।

Advertisement

মুখ্যসচিব বৈঠকে জানান, সমন্বয় বাড়ানো এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের সরলীকরণের জন্য সব দফতরের সচিবদের নিয়ে পৃথক ভাবে বৈঠক হবে। মুখ্যসচিব অন্যত্র ব্যস্ত থাকলেও দফতরের সচিবেরা সমন্বয় বৈঠক করবেন নিজেদের মধ্যে।

আরও পডু়ন: ধনখড়ের কাজকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলছেন মমতা

ভূমি দফতরের জেলা অফিসারদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কী ভাবে পুকুর বোজানো হচ্ছে, কী ভাবে তার নথি বদলে যাচ্ছে ইত্যাদি প্রসঙ্গে মুখ্যসচিবের নির্দেশ, এই সব বিষয়ে জেলাশাসকদের বাড়তি নজরদারি চালাতে হবে। লোকসভা ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে সাধারণ মানুষের অভিযোগ গ্রহণের পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৪ হাজার অভিযোগ এসেছে। ওই অভিযোগ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অফিসার পিবি সালিম বৈঠকে জানান, প্রায় ২৬০০ অভিযোগের নিষ্পত্তি বাকি। বেশি অভিযোগ এসেছে নগরোন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শ্রম দফতরের বিরুদ্ধে। হুগলি, মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং বাঁকুড়ার অভিযোগ বেশি। এক ‘‘একেবারে তৃণমূল স্তরে প্রশাসনের উপস্থিতি যাতে প্রকট থাকে, সেই ব্যবস্থাই করতে চেয়েছেন মুখ্যসচিব,’’ বলেন এক আধিকারিক।

প্রকল্প রূপায়ণে দরপত্র ডাকা, এজেন্সি বাছাই, লোক নিয়োগ ইত্যাদি কত সহজে, কত কম সময়ে করা যায়, তার উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যসচিব। টেন্ডার-পদ্ধতির দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। একটি দফতরে টানা ১১ বার দরপত্র ডাকার উদাহরণ টেনে মুখ্যসচিব জানান, কাজের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেই হবে না, অফিসারদের দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পনা করতে সময় নষ্ট করা চলবে না। এই সূত্রেই ডিজিটাল রেশন কার্ডের বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, কার্ড বা চাল রাজ্য স্তর থেকে বিলি হলেও সেটা উপভোক্তার কাছে পৌঁছচ্ছে কি না। খাদ্যসচিব তাঁকে জানান, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অনলাইন পদ্ধতি চালু হবে, তাতে উপভোক্তার চাল সংগ্রহের তথ্য জানতে পারবে রাজ্য। বিভিন্ন আমলার বক্তব্য, মুখ্যসচিব নতুন কিছু বলেননি। তবে প্রশাসনিক যন্ত্রে যে মাঝেমধ্যে ধাক্কা দিতে হয়, সেটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: নির্দেশ নয়, তবে হতেই পারে তদন্ত, সুপ্রিম কোর্টের রাফাল-রায়ে চাঙ্গা দু’পক্ষই

সরকারি আইনজীবীদের ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী যে সন্তুষ্ট নন, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। মুখ্যসচিবের নির্দেশ, সব দফতরকে আইনজীবীদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে। কেন্দ্র তথ্য চেয়ে বা অন্য কারণে বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠায়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ, কেন্দ্রকে উত্তর দেওয়ার আগে বাধ্যতামূলক ভাবে মুখ্যসচিবের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কোনও নির্দেশিকা প্রকাশের আগে তা দেখাতে হবে মুখ্যসচিবকে। শিল্প নিয়ে এ দিন সবিস্তার আলোচনা হয়নি। তবে বৈঠকে মুখ্যসচিব জানান, ‘ইজ় অব ডুইং বিজ়নেস’-এ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু তার বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে দ্রুত সেই দুর্বলতা কাটাতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement