মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলির পূর্ণ সময়ের সমস্ত শিক্ষককে ৫ নভেম্বর কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক বৈঠকে ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও শুক্রবার রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের সহসচিব অঞ্জন বিশ্বাসের পক্ষ থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে ওই বৈঠককে ‘গেট টুগেদার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উত্তরবঙ্গের শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারেন।
কী সেই বার্তা? দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মহলে। প্রথমত, শিক্ষকদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করছে বিজেপি। তৃণমূল থেকেও অনেক শিক্ষক নেতা এর মধ্যে পা বাড়িয়েছেন সে দিকে। হতে পারে, সেই ভাঙন আটকাতে কোনও বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয়ত, সেই সূত্রে উঠতে পারে বেতন কাঠামোর কথাও। এবং তৃতীয়ত, রাজ্যপাল সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয় যাওয়ার দিন থেকে তিনি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে দাবি তৃণমূলের অনেক নেতারই। প্রকাশ্যে তাঁরা অবশ্য কেউই কিছু বলছেন না। শিক্ষকমহলের একাংশের ধারণা, এই নিয়েও পরোক্ষ কোনও বার্তা আসতে পারে প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে।
মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলির শিক্ষক, পদাধিকারীদের কাছে চিঠি, ফোন যাওয়া শুরু হয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের পক্ষ থেকে। নবান্ন সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ থেকে যাতে বেশি সংখ্যায় শিক্ষক, আধিকারিকরা বৈঠকে থাকেন, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়কে। দেবকুমার জানান, এর আগে একবার এই ধরনের বৈঠক হলেও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষককে নিয়ে এতবড় আয়োজন এই প্রথম। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন, তা শুনতে সকলেই আগ্রহী। সুযোগ পেলে আমরাও আমাদের কথা জানাব।’’
শিক্ষক, আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, মঙ্গলবারের বৈঠকে রাজ্যে ইউজিসি নির্ধারিত নয়া বেতন কাঠামো চালুর কথাও ঘোষণা করা হতে পারে। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছে ইউজিসি। রাজ্যে ২০০৬ সালের বেতন কাঠামোই চলছে। শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, সিকিম ও অসম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নতুন কাঠামোয় বেতন দিচ্ছে। শিক্ষক সংগঠনগুলি নতুন কাঠামোর দাবিতে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে। তাই মঙ্গলবারের বৈঠকে এই নিয়ে কোনও ঘোষণা থাকতেও পারে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘যাঁদের ডাকা হয়েছে তাঁরা সকলেই বেতন কাঠামোর এক্তিয়ারে পড়েন। যাঁরা ওই কাঠামোর বাইরে, তাঁদের ডাকা হয়নি।’’ কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে গেরুয়া প্রভাব বাড়তে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী হয়তো ঘুরিয়ে কোনও বার্তা দেবেন।