মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত শান্ত হন বিধায়করা। ছবি: ফাইল চিত্র
বিধানসভায় শুক্রবার শাসক-বিরোধী গোলমাল সামলাতে আসরে নামতে হল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে।
এক কংগ্রেস বিধায়কের একটি প্রশ্ন এবং তাতে পরিবহণ মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বিধানসভায় এ দিন উত্তেজনা ছড়ায়। প্রায় সম্মুখসমরে নেমে পড়েন শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী কংগ্রেসের বিধায়করা। অবস্থা এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, মুখ্যমন্ত্রীকে ওয়েলে নেমে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। যে ঘটনা বিধানসভার ইতিহাসে কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিকরা।
বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে এ দিন পরিবহণ দফতর সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল। তারই সূত্রে কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজক পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করেন, উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থায় বাসের চালক এবং কন্ডাক্টর নিয়োগ কি সরকার করছে নাকি ঠিকাদারের মাধ্যমে ওই নিয়োগ হচ্ছে? একই সঙ্গে প্রতিমা এক জন ঠিকাদারের নাম করে বলেন, তিনি শুনেছেন, ওই ঠিকাদার প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন-চার লক্ষ টাকা করে নিচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানিয়ে হইহই করে ওঠেন তৃণমূল বিধায়করা। স্পিকার বিমান বন্দ্য়োপাধ্যায় প্রতিমাকে বলেন, ‘‘প্রশ্ন করতে দেওয়া হচ্ছে মানে সরকারকে অপমান করার অধিকার আপনার নেই। জনশ্রুতির ভিত্তিতে কোনও কথা সভায় না বলাই ভাল।’’ শুভেন্দু প্রতিমাকে বলেন, ‘‘হয় অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে, নয়তো এই সভায় ক্ষমা চাইতে হবে।’’ তিনি আরও কটাক্ষ করেন, ‘‘সামনের ভোটে আর জিততে হবে না! মুর্শিদাবাদ সাফ হয়ে গেছে। সব দিদির কাছে চলে এসেছে।’’
শুভেন্দুর ওই কথা শুনেই শাসক দলের বে়ঞ্চের দিকে তেড়ে যান ভরতপুরের বিধায়ক কমলেশ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে সঙ্গে ওয়েলে নেমে পাল্টা তেড়ে যান তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা এবং সোনালি গুহ। দলের অন্য বিধায়করাও হইহই করে ওয়েলে নামেন। তৃণমূল এবং কংগ্রেস— দু’পক্ষের বিধায়করাই তখন মারমুখী। পরিস্থিতি সামলাতে ওয়েলে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। দেখা যায়, তিনি তাঁর দলের বিধায়কদের তর্জনী শাসন ও ভর্ৎসনা করে নিজের নিজের জায়গায় পাঠাচ্ছেন। ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যকে পিঠে চাপড় মেরে নিজের আসনে গিয়ে বসতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
গোলমাল থামার পর স্পিকার বলেন, ‘‘আপনারা সদস্যরা এবং মাননীয় মন্ত্রীরা সকলেই একটু সংযম দেখাবেন।’’ বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর উদ্দেশে স্পিকারের পরামর্শ, ‘‘মান্নানবাবু, সুজনবাবু, আপনাদের সামনে এই ভাবে সদস্যরা আর এক দিকে মারতে চলে যাচ্ছেন, এটা ঠিক নয়।’’
পরে বিধানসভা অধিবেশনের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সময় ওই গোলমালের প্রসঙ্গ টেনে স্পিকার বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটে গেল। অনভিপ্রেত। না ঘটলেই ভাল হত। বিধানসভায় তর্কাতর্কি উত্তেজনা হয়েই থাকে। কিন্তু তার একটা সীমা থাকা উচিত। সব পরিষদীয় দলের নেতাকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।’’